যে লড়াইকে বলা হয়েছিল পেপ গার্দিওলা বনাম ব্রাজিলিয়ান গার্দিওলার (ফার্নান্দো দিনিজ) দ্বৈরথ। যেখানে গার্দিওলার কৌশল ‘নিয়ন্ত্রিত ও গোছালো’, আর দিনিজের খেলানোর ধরনকে স্বয়ং ব্রাজিলের বিশ্লেষকরাই বলেছিলেন ‘কেওস’ বা বিশৃঙ্খল নামে। সেখানে সাজানো-গোছানো ফুটবলের নজির দেখিয়ে জয় হয়েছে গার্দিওলারই। কাগজে-কলমে ম্যানচেস্টার সিটি কতটা এগিয়ে ছিল সেটি সবারই জানা। তবুও ব্রাজিলিয়ান ক্লাব ফ্লুমিনেন্সকে এভাবে উড়িয়ে দেবে, সেটা ভাবনার বাইরে ছিল। জুলিয়ান আলভারেজের জোড়া গোলে ৪-০ ব্যবধানে বড় জয় পেয়েছে ম্যানসিটি।
আর এর মাধ্যমে গত মৌসুমের ট্রেবলজয়ী ইংলিশ ক্লাবটি অধরা বিশ্বকাপও জিতে নিলো। ফ্লুমিনেন্সকে হারিয়ে ফিফা ক্লাব বিশ্বকাপের প্রথম শিরোপা উঠেছে সিটির হাতে। যদিও গার্দিওলা এর আগে আরও তিনবার এই ট্রফি জয়ের স্বাদ পেয়েছিলেন। কোচ হিসেবে সবাইকে ছাড়িয়ে সে সংখ্যাকে চারে নিয়ে গেলেন তিনি। গার্দিওলা এর আগে বার্সেলোনা ও বায়ার্ন মিউনিখের হয়ে এই ট্রফি জিতেছিলেন। এতদিন তার সঙ্গে ক্লাব বিশ্বকাপে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার দিক থেকে সমান ছিলেন রিয়াল মাদ্রিদের কিংবদন্তি কোচ কার্লো আনচেলত্তি।
গতকাল (শুক্রবার) দিবাগত রাতে সৌদি আরবের জেদ্দায় কিং আবদুল্লাহ স্পোর্টস সিটি স্টেডিয়ামের ফাইনালে মুখোমুখি হয় ম্যানসিটি ও ফ্লুমিনেন্স। দুই কোচের মিল খুঁজলেও, মাঠের লড়াইয়ে দু’দলের কতটা দূরত সেটি স্পষ্ট হয়ে যায় ম্যাচ শুরুর পরই। রেফারির বাঁশি বাজার ৪০ সেকেন্ডের মধ্যে সিটির পক্ষে আর্জেন্টাইন ফরোয়ার্ড আলভারেজের গোল। মূলত বল ক্লিয়ার করতে গিয়ে সিটির নাথান আকের পায়ে দিয়ে বসেন ফ্লুমিনেন্স ডিফেন্ডার মার্সেলো।
যদিও প্রথমে সিটি ডিফেন্ডারের নেওয়া শট ঠেকিয়ে দেন ফ্লুমিনেন্স গোলরক্ষক ফ্যাবিও। পরে ফিরতি বল বুক দিয়ে ঠেলে জালে জড়ান আলভারেজ। এরপর শুরুর ধাক্কা সামলে লড়াইয়ে ফেরার চেষ্টা চালায় ব্রাজিলের ক্লাবটি। তবে তারা সিটির রক্ষণ দেয়াল টপকাতে পারছিল না। ফলে ম্যাচে সমতা ফেরানোর আগে উল্টো নিজেদের জালেই বল জড়িয়ে বসে লাতিন আমেরিকার ক্লাব চ্যাম্পিয়নরা। তবে এতে অবশ্যই কৃতিত্ব আছে সিটি মিডফিল্ডার ফিল ফোডেনের। তার জোরালো গতির শট ফ্লুমিনেন্সের ডিফেন্ডার ও অধিনায়ক নিনো পা দিয়ে ফেরাতে গিয়ে নিজেদের জালে জড়িয়ে ফেলেন। ফলে বিরতির আগেই দ্বিগুণ লিড পেয়ে যায় সিটি।
দ্বিতীয়ার্ধে কিছুটা গোছালো খেলা শুরু করে ফ্লুমিনেন্স। অল্প সময়ের ভেতর কয়েকবার তারা সিটির রক্ষণেও হানা দিয়েছিল। কিন্তু ঠিক গোল পাওয়া হচ্ছিল না তাদের। তবে সিটির কাজটা আগেই বেশ সহজ হয়ে গিয়েছিল। এরপর শুধু ব্যবধান বাড়ানোর পালা। ফলে ম্যাচের ৭২ ও ৮৮ মিনিটে আরও দুই গোল জড়ায় গার্দিওলার শিষ্যরা। প্রথমে ফোডেন, এরপর একেবারে শেষের দিকে নিজের দ্বিতীয় গোল করেন আলভারেজ। আর এর মাধ্যমে সিটির চলতি বছরের ষোলোকলা পূর্ণ। প্রিমিয়ার লিগ, এফএ কাপ, চ্যাম্পিয়ন্স লিগ, উয়েফা সুপার কাপের পর এই বছর এটি সিটির পঞ্চম শিরোপা।
জোড়া গোলে ম্যাচসেরা আলভারেজও অনেক কিছু পেয়ে গেলেন মাত্র ২৩ বছর বয়সেই। একই মৌসুমে দেশের হয়ে বিশ্বকাপ ও ক্লাবের হয়ে ট্রেবল জিতেছিলেন। এবার ক্লাবের হয়ে আরেকবার হলেন বিশ্বসেরা। এর আগে ইংলিশ ক্লাব ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড, লিভারপুল ও চেলসি একবার করে ক্লাব বিশ্বকাপ জিতেছিল। ফলে দেশটির চতুর্থ দল হিসেবে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হলো সিটি।