আর্কাইভ কনভাটার ঢাকা, শুক্রবার, নভেম্বর ২২, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
alo

জন্মের ১৭ দিনের মাথায় ইসরায়েলি হামলায় প্রাণ গেল ফিলিস্তিনি শিশুর

Public Voice

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশিত: ২২ নভেম্বর, ২০২৪, ০৩:৩০ এএম

alo
alo

ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ডে ইসরায়েলি হামলায় এক নবজাতক শিশু নিহত হয়েছে। চলমান সংঘাতের মধ্যে মাত্র ১৭ দিন আগে তার জন্ম হয়েছিল। কিন্তু জন্ম নেওয়ার পর তিন সপ্তাহও পার করতে পারেনি এই মেয়ে শিশুটি। হামলায় ওই শিশুর ভাইও নিহত হয়েছে। বুধবার (২০ ডিসেম্বর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা এপি। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গাজা যুদ্ধের মধ্যে মাত্র ১৭ দিন আগে জন্ম নেওয়া এক ফিলিস্তিনি মেয়ে শিশু ইসরায়েলি হামলায় তার ভাইয়ের সাথে নিহত হয়েছে। শিশুটি যুদ্ধের মধ্যেই গাজার বিদ্যুৎবিহীন একটি হাসপাতালে জন্মগ্রহণ করেছিল। এপি বলছে, নিহত ওই শিশুর পরিবার তার নাম রেখেছিল আল-আমিরা আয়েশা - যার অর্থ ‘রাজকুমারী আয়েশা’। গত মঙ্গলবার তার পরিবারকে পিষে ফেলা ইসরায়েলি বিমান হামলায় নিহত হয় শিশু। মারা যাওয়ার আগে সে জীবনের তৃতীয় সপ্তাহও পূর্ণ করতে পারেনি। গত মঙ্গলবার ভোরের আগে হওয়া হামলায় যখন রাফাহতে ওই শিশুর অ্যাপার্টমেন্ট বিল্ডিং ধ্বংস হয়ে যায় তখন তার বর্ধিত পরিবারের সদস্যরা ঘুমিয়ে ছিল বলে শিশুটির দাদী সুজান জোয়ারাব জানান। হামলা থেকে অবশ্য তিনি বেঁচে যান। হাসপাতালের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ওই হামলায় ২৭ জন নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে আমিরা ও তার ২ বছর বয়সী ভাই আহমেদও রয়েছে। দাদী সুজান জোয়ারাব বলছেন, ‘মাত্র ২ সপ্তাহের বয়স তার। এমনকি তার নামও নিবন্ধন করা হয়নি।’ ইসরায়েলি হামলায় সুজানের ছেলেও আহত হয়েছেন। আহত ছেলের হাসপাতালের বিছানার পাশ থেকে সুজান যখন এসব কথা বলছিলেন তখন তার কণ্ঠ কাঁপছিল। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মতে, গত ৭ অক্টোবর থেকে টানা প্রায় আড়াই মাস ধরে গাজায় আগ্রাসন চালাচ্ছে ইসরায়েল। ইসরায়েলি এই আগ্রাসনের নিহত হয়েছেন প্রায় ২০ হাজার ফিলিস্তিনি। নিহতদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু। অবরুদ্ধ গাজায় ইসরায়েলি বিমান হামলায়ই তাদের বেশিরভাগ নিহত হয়েছেন। হামলার কারণে ফিলিস্তিনি বহু পরিবার ধ্বংস হয়ে গেছে। এপি বলছে, জোয়ারাবের পরিবার গাজার কয়েকজন ফিলিস্তিনিদের মধ্যে ছিলেন যারা সংঘাতের মধ্যেও নিজেদের ঘরেই থেকে গিয়েছিলেন। একবিংশ শতাব্দীর অন্যতম ধ্বংসাত্মক এই ইসরায়েলি আক্রমণ প্রায় ১৯ লাখ ফিলিস্তিনিকে বাস্তুচ্যুত করেছে। যা এই অঞ্চলের মোট জনসংখ্যার ৮০ শতাংশেরও বেশি। ঘরবাড়ি হারানোর পর তাদের জাতিসংঘের স্কুল, হাসপাতাল, তাঁবু ক্যাম্প বা রাস্তায় আশ্রয়ের সন্ধানে পাঠানো হয়েছে। কিন্তু জোয়ারাবের পরিবারের সদস্যরা তাদের তিনতলা অ্যাপার্টমেন্ট বিল্ডিংয়ে থেকে যান। সুজানের দুই ছেলের ওপরের তলায় অ্যাপার্টমেন্ট ছিল, কিন্তু বর্ধিত পরিবার নিচতলায় একসঙ্গে ভিড় করে অবস্থান করছিলেন। তাদের বিশ্বাস ছিল, এটি হয়তো তাদের জন্য নিরাপদ হবে। কিন্তু গত মঙ্গলবার ভোরে যখন ইসরায়েলি হামলা হয় আদেল নামে এক সাংবাদিকনহ জোয়ারাব পরিবারের কমপক্ষে ১৩ জন সদস্য এবং সেইসাথে আশপাশে আশ্রয় নেওয়া বাস্তুচ্যুত আরও অনেকে নিহত হন। সুজান বলেন, ‘আমরা দেখতে পেলাম পুরো বাড়িটি আমাদের ওপর ভেঙে পড়েছে। পরে উদ্ধারকর্মীরা ধ্বংসস্তূপ থেকে তাদের এবং অন্যান্য ক্ষতিগ্রস্তদের জীবিত ও মৃত অবস্থায় টেনে বের করে।’ ইসরায়েল দাবি করেছে, তারা গাজা ভূখণ্ডজুড়ে হামাসের লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালাচ্ছে এবং বেসামরিক মানুষের মৃত্যুর জন্য সন্ত্রাসীরা দায়ী করে কারণ তারা আবাসিক এলাকায় তাদের কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে। নিহত হওয়ার সময় আল-আমিরা বা রাজকুমারী আয়েশার বয়স ছিল মাত্র ১৭ দিন। সে গত ২ ডিসেম্বর রাফাহ শহরের এমিরাতি রেড ক্রিসেন্ট হাসপাতালে জন্মগ্রহণ করেছিল। জন্মের সময়ও হাসপাতালটিতে কোনও বিদ্যুৎ ছিল না বলে সুজান জানান। তিনি বলেন, ‘আয়েশা খুব কঠিন পরিস্থিতির ভেতরে জন্মগ্রহণ করেছিল।’ গত সোমবার পর্যন্ত গাজা উপত্যকাজুড়ে ভূখন্ডটির ৩৬টি হাসপাতালের মধ্যে ২৮টিই ছিল পরিষেবার বাইরে। জাতিসংঘ বলেছে, বাকি আটটি স্বাস্থ্যকেন্দ্র শুধুমাত্র আংশিকভাবে চালু রয়েছে। চলমান এই ধ্বংসযজ্ঞের মধ্যে প্রায় ৫০ হাজার ফিলিস্তিনি নারী গর্ভবতী বলে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) জানিয়েছে। আয়েশা এবং তার ভাই আহমেদ মারা গেলেও তাদের বাবা-মা বেঁচে গেছেন। তাদের মা মালাক এবং বাবা মাহমুদ আহত হয়েছেন। মাহমুদ যখন রাফাহের কুয়াতি হাসপাতালে তার বিছানায় শুয়েছিলেন সুজান তখন সমাধিস্থ করার আগে দুটি শিশুকে শেষ বিদায়ের জন্য তাদের কাছে নিয়ে এসেছিলেন। নিজে আহত হয়েও মৃত শিশুদের দেখে মাহমুদ যন্ত্রণায় কাতর হয়ে ওঠেন। তিনি আহমেদকে সাদা কাফনে কাপড়ে মোড়ানো অবস্থায় কাছে টেনে নেন। আর তার স্ত্রী আয়েশাকে জড়িয়ে ধরেছিলেন। তাকেও সাদা কাপড়ে মুড়িয়ে রাখা হয়েছিল। সুজান বলেন, ‘আমি আমার নাতি-নাতনিদের রক্ষা করতে পারিনি। আমি চোখের পলকে তাদের হারিয়েছে।

alo
alo