“এমন তো কথা ছিল না
কথা ছিল তুমি লিখবে
সোনামণিদের জন্য অনেক কিছু
মায়ের কোলে মাথা রেখে
তোমার লেখা গল্প কবিতা গান
শুনতে শুনতে সোনামণিরা
সপ্ন দেখবে নতুন সকালের
সেই তুমিই হয়ে গেলে গল্প কবিতা গান”
হ্যাঁ এমন কথা ছিল না কিন্তু সেটাই হয়ে গেল। তাঁকে আর পাওয়া যায় না। শিশুদের মাঝে কবিতা গানের আসরে অনুষ্ঠানে সভা সমাবেশে, মিছিলে, শ্লোগানে, প্রতিবাদে, অনুষ্ঠানের মহড়ায়, অসহায় এর পাশে, গল্পের আড্ডায়, নানা বিতর্ক প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে সেরা বক্তা হিসেবে অল্প সময়ে জনপ্রিয়তা লাভ করেন। তার ইচ্ছা ছিল চাচা বীর মুক্তি যোদ্ধা দেশ বরেণ্য জাতীয় পুরষ্কার প্রাপ্ত গিতিকার নাট্য ব্যাক্তিত্ত মুস্তাফিজুর রহমান গামা কে নিয়ে স্মৃতি পরিষদ গঠন করার। তাঁর স্পর্শে বা সংস্পর্শে তাঁর প্রতিভার বিকশিত হয়ে তা ছরিয়ে পরে সারা দেশে। পড়া লেখার পাশাপাশি পরিচিত হয়ে ওঠেন কবি,লেখক, সাহিত্যিক,গীতিকার, শুরকার, গল্পকার, উপস্থাপক, সাংকৃতিক ব্যক্তিত্ব পরিচয়ের। অত্যান্ত সাদাসিদা এই ব্যাক্তিত্ব নিজেকে বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ পরিবারের সদস্য হিসেবে পরিচয় দিতে সাচ্ছন্দবোধ করতেন। সকল শিশুদের প্রতি ছিল তাঁর অন্যরকম অনুভুতি ও ভালোবাসা।
মনে পরে শিশুদের জন্য একটি মঞ্চের প্রস্তাব দিলে তাৎক্ষনিক পদক্ষেপ নিয়ে তা রাজশাহী শিশু একাডেমী চত্তরে বাস্তবায়ন করেন। তাঁর লেখা বই গানের ক্যাসেট উপহার দিয়ে সহযোগিতা চেয়েছিলেন। সেদিন তাঁর চোখের তারায় দেখেছিলাম হাসির সপ্ন। “ভুল করেও খুজনা মোরে” এটি ছিল তাঁর লেখা শেষ কবিতায় অংশ বিশেষ। তিনি ছিলেন এই অঞ্চলের মাটিয় মানুষের কাছের জন। একটি জনসভায় বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন “বেবীর মত ব্যাক্তিত্বের প্রয়োজন” তিনি সকলের কাছে ছিলেন প্রিয়। দিন তারিখ মনে নেই, একদিন সন্ধায় রাজশাহী শিশু একাডেমীতে অসুস্থ অবস্থায় সর্ব দলীয় পরিবেশ সংক্রান্ত মত বিনিময় সভায় হঠাৎ করে এসে কারো বারণ না শুনে বক্তব্য দিয়ে সারা ফেলে দেন। অসুস্থ হয়ে পড়লে ঢাকায় পরে দেশের বাইরে নেওয়া হল। ঘুমিয়ে পড়লেন। সকলে ভাবলেন হয়ত জেগে উঠবেন। কিন্তু সবার আশা ভঙ্গ করে দিয়ে পরপারে পারি দিলেন। তারিখ টা ০৩ নভেম্বার, ২০০৫। পরের দিন ০৪ নভেম্বার ছিল ঈদের দিন। বিকেলে তাঁর লাশ আনা হয় রাজশাহী জেলা সদরের সোনাদিঘীর মোড় হয়ে সাহেব বাজার জিরো পয়েন্ট এ। মেয়র, সাবেক মেয়র, উপাচার্য, বীর মুক্তিযোদ্ধা, রাজনৈতিক ব্যাক্তিবর্গ, শিক্ষাবিদ, আইনজীবী, কবি, লেখক, বুদ্ধিজীবী, সাহিত্যিক, গীতিকার, সাংবাদিক, সহ সকল মানুষ এলেন। সকলের একটাই কথা, উনি ছিলেন এই অঞ্চলের মাটি ও মানুষের কাছের জন, বীর মুক্তিযোদ্ধা ও শহিদ পরিবারের সদস্য। তার অন্তিম যাত্রায়, চারি পাশ থেকে যেন কানে ভেসে আসতে থাকে তারি কণ্ঠ।
“রেসকোর্সের উত্তাল তরঙ্গ
কালুরঘাট বেতারের দীপ্ত কণ্ঠ”
তাকে শেষ বিদায় দেবার মুহুর্তে রাজশাহী জেলা সদরের মহিষবাথান গৌরস্থান সংলগ্ন জানাজা স্থলে জন নেতা ফজলে হোসেন বাদশা বলেন “আমাদের সপ্ন শেষ হয়ে গেল”। অনেকে হয়ত বলবেন, ভাববেন এত বছর পর কেন এই লেখা? বলতেও পারেন ভাবতেও পারেন। কিন্তু কিছু স্মৃতি থেকেই যায়। সে সময় কার “সাপ্তাহিক দুনিয়ায়” তার লেখা ও তাকে নিয়ে অনেক লেখা মন্তব্য জনপ্রিয়তা পেয়েছিল। রাজশাহী শিশু একাডেমী সাবেক পরিচালক নাট্য ব্যাক্তিত্ব সুখেন মুখার্জি বলেন “বেবি একটি প্রতিভা। তাকে আরও প্রয়োজন ছিল”। সংগীত শিল্পী জতন কুমার পাল বলেন “সালেহ উদ্দিন বেবি ছিলেন অসাধারণ, অসাম্প্রদায়িক, মুক্ত মনের, ব্যাতিক্রমধর্মী মানুষ”।
লেখক: মুক্তিযুদ্ধের তথ্য সংগ্রাহক, সমাজ ও সাংস্কৃতিক কর্মী, রাজশাহী।