রাজশাহী-৩ (পবা-মোহনপুর) আসনের আওয়ামী লীগ মনোনীত সংসদ সদস্য প্রার্থী আসাদুজ্জামান আসাদ বলেছেন, দীর্ঘ রাজনৈতিক পথচলায় আমার জীবনে মানুষকে অপমান করার ইতিহাস নেই। আমার চরম শত্রুরাও আমাকে এই দায়ে অভিযুক্ত করতে পারবে না। আমি মানুষ, আরেকজন মানুষকে সম্মান দিয়ে সম্মান অর্জনের চেষ্টা করি। আমি রাজনীতি করি সম্মান অর্জনের জন্য, অর্থ উপার্জনের জন্য নয়। আমি অন্যান্য দলের রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দকেও সম্মানের চোখে দেখি। রাজনৈতিক কারণে শুধুমাত্র প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার জন্য আমি তাদেরকে হয়রানির শিকার করবো না।
বৃহস্পতিবার (২১ ডিসেম্বর) বিকেলে রাজশাহীর মোহনপুর উপজেলার আত্রাই ডিগ্রী কলেজ মাঠে আয়োজিত এক বিশাল নির্বাচনী সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে আসাদ এসব কথা বলেন।
আসাদুজ্জামান আসাদ বলেন, আওয়ামী লীগ শুধু আওয়ামী লীগের মধ্যে ঐক্যের বাতায়ন তৈরি করে না। আওয়ামী লীগ তো মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের মানুষগুলোকেই একই ছাতার নিচে নিয়ে পথ চলে। এবারের নির্বাচনেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একই কাজ করেছেন। আমাদের মনোনয়নের লড়াই ছিল ২৬ নভেম্বর পর্যন্ত, যেদিন আওয়ামী লীগের সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মনোনয়ন ঘোষণা করেছেন এবং আমাকে মনোনয়ন দিয়েছেন। আমরা যারা আওয়ামী লীগ করি সেদিনই আমাদের বিভেদ শেষ।
তিনি আরও বলেন, শেখ হাসিনা যখন মনোনয়ন ঘোষণা করেন তখন আমরা চলে যাই এক ছাতার নিচে। আমাকে আওয়ামী লীগের আপনারা মনে না করেন, শেখ হাসিনার নৌকার পক্ষে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করেন। এই এমপি পদ কারো রেজিস্ট্রি করা পদ না, এই এমপি পদ আওয়ামী লীগের ধারাবাহিকতার ফল। আজ আমি আছি, আগামী পাঁচ বছর আমি থাকবো কি না এর গ্যারান্টি কেউ দিতে পারে না। নেত্রীর পরিবর্তন করা নিয়ে কেউ যদি মনোক্ষুণ্ণ হন সে আওয়ামী লীগ করে কি না সেটি বিবেচনা করতে হবে।
রাজশাহী-৩ আসনের আওয়ামী লীগের এই প্রার্থী আরও বলেন, এই বাংলাদেশের মালিক ১৮ কোটি জনগণ। জানুয়ারির প্রথম দিনেই নতুন বই হাতে পেয়ে আপনার সন্তানরা যখন আনন্দিত হয়ে বাড়ি ফিরবে, তাদের এই হাসিমুখ দেখে কি আপনাদের মনে এতটুকুও আনন্দের উদ্রেক হয় না? আমরা যখন পড়াশোনা করেছি কেউ কোনোদিন নতুন বই পাবো ভাবিও নি। যারা একটু অর্থনৈতিকভাবে স্বচ্ছল তারাও নতুন বই পেতে পেতে মে-জুন মাস পার হতো। এই হাসির জন্য যদি আপনি আনন্দিত হন মনে রাখবেন সেই আনন্দের পেছনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত আছে। এই বাংলাদেশ মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকার জন্য হলেও আগামী ৭ জানুয়ারি আপনাকে ভোট দিতে হবে। যদি বিবেক বলে আপনারা আমাকে ভোট দিবেন, যদি না বলে অন্য যারা আছে তাদেরই দিবেন। আমি স্বতঃস্ফূর্তভাবে এই এলাকার মানুষদের ভোট কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দেওয়ার অনুরোধ জানাই।
আসাদ আরও বলেন, করোনাকালীন সময়ে যখন পুরো পৃথিবী অবরুদ্ধ। বিজ্ঞানীরা বলছে, পৃথিবীতে কোটি কোটি মানুষ করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যাবে। বাংলাদেশসহ গোটা পৃথিবীতেই বাস চলে না, ট্রেন চলে না, মসজিদে তালা, কাবা শরিফে তালা, মসজিদে নববীতেও তালা। সন্তান মরলে পিতা যায় না, পিতা মরলে সন্তানরা এগিয়ে যেতে পারে না। এমন বিভীষিকাময় পরিস্থিতিতে শেখ হাসিনা জাতির উদ্দেশ্যে বললেন, সৃষ্টিকর্তার উপর ভরসা রাখুন। আমি চেষ্টা করছি, বিজ্ঞানীরা করোনার বিরুদ্ধে ঔষধ আবিষ্কার করার চেষ্টা করছেন। যেদিন করোনার ঔষধ আবিষ্কার হবে, পৃথিবীর সমস্ত ধনী দেশ সেই ঔষধ পাবে, আমি কথা দিলাম একই সময় ওই ঔষধ বাংলাদেশে নিয়ে আসবো।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেই কথা রেখেছেন। সেই টিকা কি শুধু আওয়ামী লীগের কর্মীরা গ্রহণ করেছে, বিএনপির বন্ধুরা সেই টিকা গ্রহণ করে নি? শুধু এক ডোজ, দুই ডোজ, তিন ডোজ নয়, কেউ কেউ চার ডোজও টিকা গ্রহণ করেছেন বিনামূল্যে। পৃথিবীর সমস্ত দেশ টিকা দিয়ে কিছু হলেও টাকা নিয়েছেন, কিন্তু শেখ হাসিনা কোনো টাকা নেন নি। ওই টিকা গ্রহণে যদি জীবনধারণে সক্ষমতা বৃদ্ধি পান, তাহলে তো আপনার বিবেকের কাছে আমরা নৌকা প্রতীকে ভোটটি চাইতে পারি বলেও দাবি করেন নৌকা প্রতীকের এই প্রার্থী।
রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আসাদ বলেন, যেই ধর্মপ্রাণ মুসলমান আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে কথা বলেন, ওই সমস্ত বন্ধুর বিবেকের কাছে বলতে চাই, পৃথিবীর কোন মুসলিম রাষ্ট্রনায়ক একসাথে ৫০৭টি মডেল মসজিদ তৈরি করেছে? বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ছাড়া পৃথিবীর কোনো রাষ্ট্রপ্রধানরা এই কাজটি করতে পারেন নি। এতোকিছুর পরেও কেন নৌকা প্রতীকে ভোট চাইতে পারবো না।
ঘাসিগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমানের সভাপতিত্বে সভায় মোহনপুর উপজেলা দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক এনামুল হক, রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আকবর হোসেন, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজ উদ্দিন কবিরাজ, ঘাসিগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আফজাল হোসেন বকুল, রাজশাহী জেলা যুবলীগের সাবেক সহ-সভাপতি আলমগীর মোর্শেদ রঞ্জু, রাজশাহী মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান বাবু, জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক উপ-দপ্তর সম্পাদক শরিফুল ইসলাম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।