গাজায় ইসরায়েলের সামরিক অভিযান চলার মধ্যে ২৪ ঘণ্টায় কমপক্ষে ২৪১ জন নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন ফিলিস্তিনের গাজায় হামাস পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। একই সময়ের মধ্যে আহত হয়েছেন ৩৮২ জন।
ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস এ যুদ্ধকে জনগণের বিরুদ্ধে ‘গুরুতর অপরাধ’ হিসেবে অভিহিত করেছেন।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর প্রধান হেরজি হালেভি বলেছেন, হামাসের সঙ্গে তাদের চলমান লড়াই আরও অনেক মাস স্থায়ী হতে পারে।
মধ্য গাজায় স্থল অভিযানের পরিকল্পনা করা হচ্ছে বলে গুঞ্জন চলার মধ্যে গতকাল মঙ্গলবার ইসরায়েল বলেছে, তারা ১০০টির বেশি জায়গায় হামলা চালিয়েছে।
আজ বুধবার ভোরেও ইসরায়েল–সংলগ্ন গাজা সীমান্তে ব্যাপক বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে।
গত ৭ অক্টোবর ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস ইসরায়েলে হামলা চালায়। ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষের হিসাব অনুসারে, ওই হামলায় প্রায় ১ হাজার ২০০ ইসরায়েলি নিহত হয়েছেন। যাঁদের বেশির ভাগই বেসামরিক নাগরিক। সেদিন প্রায় ২৪০ জনকে ইসরায়েল থেকে জিম্মি করে হামাস। তাঁদের কয়েকজনকে পরে ছেড়ে দেওয়া হয়।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুসারে, ১১ সপ্তাহের বেশি সময় ধরে চলা সংঘাতে কমপক্ষে ২০ হাজার ৯১৫ জন নিহত হয়েছেন। নিহত ব্যক্তিদের বেশির ভাগই শিশু ও নারী। যুদ্ধরত দুই পক্ষের দাবিগুলোর সত্যতা স্বতন্ত্রভাবে যাচাই করতে পারেনি বিবিসি।
ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস মনে করেন, গাজায় চলমান এ যুদ্ধ বিধ্বংসী যুদ্ধের মাত্রাকেও ছাড়িয়ে গেছে। ফিলিস্তিনি জনগণের ইতিহাসে একে নজিরবিহীন ঘটনা বলে উল্লেখ করেছেন তিনি।
রামাল্লাতে মিসরের এক টিভি চ্যানেলকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে আব্বাস বলেন, ‘ভূখণ্ডটিকে (গাজা) চেনা যাচ্ছে না।’ অধিকৃত পশ্চিম তীরও যেকোনো সময় তছনছ হয়ে যেতে পারে বলে সাবধান করেছেন তিনি। গাজায় ৭ অক্টোবর ইসরায়েলি হামলা শুরুর পর এটি সংবাদমাধ্যমকে আব্বাসের দেওয়া প্রথম কোনো সাক্ষাৎকার।
আব্বাস বলেছেন, গাজায় যুদ্ধবিরতির দাবিতে জাতিসংঘে উত্থাপিত খসড়া প্রস্তাবে ভেটো দিয়ে ওয়াশিংটন যুদ্ধকে দীর্ঘায়িত করছে।
ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) প্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল হালেভি এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, চলমান যুদ্ধে ইসরায়েলের অর্জনগুলোকে দীর্ঘস্থায়ী করতে আরও অনেক মাস এ যুদ্ধ চালিয়ে যেতে হবে।
হালেভি আরও বলেন, কোনো সন্ত্রাসী সংগঠনকে একেবারে ধ্বংস করে দিতে চাইলে একরোখা এবং সংকল্পবদ্ধভাবে লড়াই চালানো ছাড়া কোনো সহজ ও সংক্ষিপ্ত পথ নেওয়ার সুযোগ নেই। এর কোনো জাদুকর সমাধান নেই।
ইসরায়েল ও আরব সংবাদমাধ্যমগুলো বলেছে, যুদ্ধবিরতির জন্য মিসর একটি পরিকল্পনা প্রস্তাব করেছে। সেখানে ইসরায়েলি হামলা বন্ধ ও ইসরায়েল থেকে জিম্মি হওয়া ব্যক্তিদের সবার মুক্তি এবং ইসরায়েলি কারাগার থেকে ফিলিস্তিনি বন্দীদের মুক্তির কথা বলা হয়েছে।
এর আগে কাতারের মধ্যস্থতায় ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে সাময়িক যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়েছিল। এর আওতায় গাজা থেকে কয়েকজন জিম্মি ও ইসরায়েলি কারাগার থেকে কয়েকজন ফিলিস্তিনি ছাড়া পান। এখন পর্যন্ত ইসরায়েল ও হামাস দুই পক্ষই দীর্ঘমেয়াদি যুদ্ধবিরতি কার্যকরের বিষয়টি প্রত্যাখ্যান করে আসছে।
সুত্র: বিবিসি