দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রায় একশ আসনে রয়েছেন শক্তিশালী স্বতন্ত্র প্রার্থী। ভোটের মাঠে তারা নৌকা প্রতীকের প্রার্থীকে চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছেন। স্বতন্ত্র প্রার্থীদের অনেকেই চলমান সংসদের সদস্য কিংবা জেলা-উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বা সাধারণ সম্পাদক। আছেন শোবিজের তারকা প্রার্থীও। এ প্রার্থীদের অনেকে প্রতীক হিসেবে বেছে নিয়েছেন ট্রাক কিংবা ঈগল। এর মধ্যে আছেন নারীর প্রতি বিদ্বেষপূর্ণ, অশালীন ও অবমাননাকর বক্তব্য এবং টেলিফোনে এক চিত্রনায়িকাকে অশালীন মন্তব্য করা এবং হুমকি দেওয়ার অডিও ফাঁস হওয়ার জেরে তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রীর পদ ছাড়তে বাধ্য হওয়া মুরাদ হাসান। এবার জামালপুর-৪ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন না পেয়ে ঈগল প্রতীকে মাঠে নেমেছেন তিনি। আর আলোচিত চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহি রাজশাহী-১ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন না পেয়ে মাঠে নেমেছেন ট্রাক প্রতীকে। তার প্রতিদ্বন্দ্বী নৌকা প্রতীকের বর্তমান সংসদ সদস্য ওমর ফারুক চৌধুরী। শুধু এ দুজনই নন ১১ মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীসহ কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের এক ডজন নেতার জয়ের পথে বড় বাধা এ স্বতন্ত্ররাই। খুলনায় ৩৬ আসনের মধ্যে ১৫টিতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা দেশের আট বিভাগের মধ্যে সবচেয়ে বেশি প্রতিদ্বন্দ্বিতা হতে যাচ্ছে খুলনা বিভাগে। ৩৬ সনের মধ্যে কমপক্ষে ১৫ আসনে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে বলে মনে করা হচ্ছে। এরমধ্যে যশোর জেলার ৬ টি আসনের ৬ টিতেই চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে নৌকা। যশোর-১ (শার্শা) আসনে নৌকা প্রতীকের তিনবারের সংসদ সদস্য শেখ আফিল উদ্দিনের বিপক্ষে ট্রাক প্রতীকে স্বতন্ত্র প্রার্থী বেনাপোলের সাবেক পৌর মেয়র আশরাফুল আলম। যশোর-২ আসনে নৌকার প্রার্থী তৌহিদুজ্জামান তুহিনের সঙ্গে প্রার্থী হয়েছেন সাবেক এমপি মনিরুল ইসলাম, তার প্রতীকও ট্রাক। যশোর-৩ আসনে কাজী নাবিল আহমেদের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী সদর উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি মোহিত কুমার নাথও রয়েছেন ঈগল প্রতীকে। যশোর-৪ আসনে নৌকার প্রার্থী এনামুল হক বাবুলের বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র হয়ে ঈগল প্রতীকে লড়ছেন বর্তমান সংসদ সদস্য রণজিৎ কুমার রায়। যশোর-৫ আসনে নৌকার স্বপন ভট্টাচার্য্যের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী ইয়াকুব আলী লড়ছেন ঈগল প্রতীকে। যশোর-৬ আসনে নৌকার প্রার্থী শাহীন চাকলাদারের বিপক্ষে স্বতন্ত্র প্রার্থী সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান এইচএম আমির হোসেন লড়ছেন কাঁচি প্রতীকে। বিভাগের অন্য জেলা কুষ্টিয়ায়ও মিলেছে প্রতিদ্বন্দ্বিতার আভাস। কুষ্টিয়া-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য রেজাউল হক চৌধুরী ট্রাক প্রতীকে লড়বেন নৌকার বর্তমান সংসদ সদস্য আ কা ম সরওয়ার জাহান বাদশাহর সঙ্গে। কুষ্টিয়া-২ আসনে জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু নৌকা পেলেও তার শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী মিরপুর উপজেলার সদ্য পদত্যাগকারী চেয়ারম্যান কামারুল আরেফিন লড়ছেন ট্রাক প্রতীকে। কুষ্টিয়া-৩ আসনে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফকে লড়তে হবে ঈগল প্রতীকের শক্ত স্বতন্ত্র প্রার্থী পারভেজ আনোয়ার তনুর সঙ্গে। ঝিনাইদহ-৩ আসনে নৌকার সালাহ উদ্দিন মিয়াজীর বিরুদ্ধে সাবেক দুই সংসদ সদস্য শফিকুল আজম খান চঞ্চল ট্রাক ও নবী নেওয়াজ ঈগল প্রতীকে মাঠে নেমেছেন। এ বিভাগের মেহেরপুর ১ ও ২, চুয়াডাঙ্গা-১, খুলনা ৪ ও ৬ আসনে নৌকার প্রার্থীদের সঙ্গে লড়াই হবে বিদ্রোহীদের। রাজশাহীর ৩৯ আসনের ১০টিতে লড়াই রাজশাহী-১ চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহি ছাড়াও এ বিভাগের আরও ৯ আসনে নৌকার সঙ্গে ট্রাক ও ঈগল প্রার্থীদের শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে বলে মনে করা হচ্ছে। রাজশাহী-৬ আসনে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমের বিরুদ্ধে লড়ছেন আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি রায়হানুল হক। রাজশাহী ৪ ও ৬, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-১ ও ২ এবং নাটোর-১, ২, ৩ ও ৪ আসনে নৌকার প্রার্থীদের সঙ্গে লড়াই হবে বিদ্রোহীদের। স্বতন্ত্রদের সঙ্গে সবচেয়ে কম লড়াই রংপুরে রংপুর বিভাগের ৩৩টির মধ্যে নৌকার সঙ্গে বিদ্রোহীদের লড়াই হবে মাত্র একটি আসনে। রংপুর-৫ আসনে নৌকার নবাগত প্রার্থী রাশেক রহমানের সঙ্গে ট্রাক নিয়ে লড়ছেন জাকির হোসেন সরকার। বরিশালে ২১টির মধ্যে ৪ আসনে শক্তিশালী স্বতন্ত্র প্রার্থী বরিশাল-৩ আসনে নৌকার প্রার্থী ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেননের সঙ্গে লড়ছেন আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি মনিরুল ইসলাম মনি ও স্বতন্ত্র প্রার্থী শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হকের নাতি ফাইয়াজুল হক। এ ছাড়া পিরোজপুর ১ ও ২ এবং পটুয়াখালী-৪ আসনে নৌকার প্রার্থীদের সঙ্গে লড়াই হবে স্বতন্ত্রদের। ময়মনসিংহে ২৪ আসনের ৮টিতে স্বতন্ত্রদের লড়াই এদিকে ময়মনসিংহের ২৪ আসনের মধ্যে ৮টিতে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নেমেছেন আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। ময়মনসিংহ বিভাগের জামালপুর-৪, ময়মনসিংহ-১, ৩, ৪, ৭ ও ১১ আসনে নৌকার প্রার্থীদের সঙ্গে লড়াই হবে স্বতন্ত্রদের। নেত্রকোনা জেলার ৫ আসনের মধ্যে ১, ২ ও ৩ আসনে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে স্বতন্ত্রদের। সিলেটের ১৯ আসনের ৮টিতে হবে লড়াই সিলেট-৩ ও ৬, সুনামগঞ্জ ১, ২ ও ৫ আসনে নৌকা প্রতীকের সঙ্গে লড়বেন স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। বিভাগের মৌলভীবাজার-২ ও হবিগঞ্জ ২ ও ৪ আসনে নৌকার প্রার্থীদের সঙ্গে লড়াই হবে স্বতন্ত্রদের। ঢাকার ৭০ আসনের মধ্যে ২৫ টিতে স্বতন্ত্রদের লড়াই ঢাকা ৩, ৪,৫, ১১ ও ১৯ আসনে রয়েছে শক্তিশালী স্বতন্ত্র প্রার্থী। এ ছাড়া এ বিভাগে নরসিংদী-১, ৩, ৪ ও ৫ আসনে নৌকার সঙ্গে লড়াই হবে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের। মুন্সীগঞ্জ-৩, নারায়ণগঞ্জ-১, মানিকগঞ্জ-২, কিশোরগঞ্জ-১,২ ও ৫ আসনে নৌকার প্রার্থীদের সঙ্গে লড়াই হবে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের। টাঙ্গাইল-২, ৩, ৫ ও ৭ নৌকার প্রার্থীদের সঙ্গে লড়াই হবে বিদ্রোহীদের। গাজীপুর-১, ২ ও ৩ আসনে নৌকার প্রার্থীদের সঙ্গে লড়াই হবে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের। এ ছাড়া ফরিদপুর-১, ২ ও ৪ আসনে নৌকার প্রার্থীদের সঙ্গে লড়াই হবে বিদ্রোহীদের। মাদারীপুর-৩, রাজবাড়ী-১ ও ২, শরীয়তপুর-২ নৌকার প্রার্থীদের সঙ্গে লড়াই হবে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের। চট্টগ্রাম বিভাগে ৫৮ আসনে লড়াই ২৮টিতে চট্টগ্রাম-১, ৩, ৫,৮, ১০, ১১, ১২, ১৪, ১৫ ও ১৬ আসনে নৌকার প্রার্থীদের লড়াই করবেন স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। কুমিল্লা-২, ৪, ৫ ও ৬, নোয়াখালী-১, ২, ৩ ও ৪ এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়া-১, ২ ও ৩ আসনে নৌকার প্রার্থীদের সঙ্গে লড়বেন স্বতন্ত্ররা। এ ছাড়া, চাঁদপুর-৩ ও ৫, লক্ষ্মীপুর-১, ৩ ও ৪ আসনেও নৌকার প্রার্থীদের সঙ্গে স্বতন্ত্রদের লড়াই হবে।