Mahiya Mahi
নিজস্ব প্রতিবেদক প্রকাশিত: ২১ নভেম্বর, ২০২৪, ০৭:৫৮ এএম
নানান চড়াই-উতরাই পার করে শেষ পর্যন্ত ভোটের মাঠে টিকে আছেন আলোচিত চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহি। রাজশাহীর মেয়ে মাহি নৌকার মনোনয়ন চেয়েও পাননি। অবশেষে, ট্রাক প্রতীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবেই। প্রতীক পাবার পর থেকে নির্বাচনী এলাকায় গণসংযোগ করছেন তিনি। গণসংযোগ ও নিজ প্রতীকের প্রচারণাকালে অন্য একজন ভাইটাল প্রার্থীর পরোনিন্দা তুল্য কর্মকান্ডে মাহির উপর অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন তানোর-গোদাগাড়ী আসনের সাধারণ ও সচেতন ভোটাররা। এছাড়াও বিভিন্ন সময় বিভিন্ন অঞ্চলের সংসদ সদস্য হবার অভিপ্রায় ও আশা-আকাঙ্খা ও চেষ্টা তদবির করার বিষয়গুলো নিয়েও ভোটারদের মধ্যে বইছে আলোচনা-সমালোচনার ঝড়।
ফেসবুক লাইভে চিত্রনায়ি়কা মাহিয়া মাহি সরকার ও তার স্বামী রকিব সরকার মানহানিকর তথ্য প্রচার করায় ২০২৩ সালের মার্চ মাসে আইনশৃঙ্খলা অবনতি ঘটানোর চেষ্টা করার অভিযোগে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে উভয়ের নামে একটি মামলা হয়। পরবর্তীতে ২০২৩ সালের ১৮ মার্চ শনিবার দুপুর পৌনে ১২টায় ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে মাহি পুলিশের হাতে গ্রেফতার হন। একইদিনে আদালত থেকে তিনি জামিন নেন।
মাহির বিরুদ্ধে করা ঐ মামলার বিষয়বস্তু টেনে গোদাগাড়ীর স্থানীয় ও সচেতন ব্যক্তিরা বলেন, ঐ সময়ে ডিএমপির কমিশনার মোল্লা নজরুল ইসলাম বিভিন্ন গণমাধ্যমে বলেছিলেন, চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহি ও তাঁর স্বামী রকিব সরকার প্রশাসনকে অপমান, অপদস্ত ও হেয়প্রতিপন্ন করার উদ্দেশ্যে বিভিন্ন মিথ্যা, বানোয়াটা, আক্রমণাত্মক, কুরুচিপূর্ণ ও মানহানিকর তথ্য প্রচার করে আইনশৃঙ্খলা অবনতি ঘটানোর অপরাধ করার কারণে তাঁদের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করা হয়েছে। সেই ধারাবাহিকতায় আসন্ন নির্বাচনেও মাহি তেমনটাই আচরণ করছেন বলে মন্তব্য স্থানীয়দের। স্থানীয়রা বলেন, অন্যের কাজে প্রতিহিংসামূলক মনোভাব নিয়ে দোষারোপ করাটা মাহির নিয়মে পরিণত হয়েছে।
মাহিয়া মাহির প্রচরণা আর গণসংযোগ নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে স্থানীয় ভোটাররা বলেন, সংসদ সদস্য পদ পাবার আশায় নির্বাচন করছেন মাহি। অর্থ্যাৎ, তিনি স্থানীয় জনগণের প্রতিনিধি ও আইন প্রণেতার একটি অংশ হবার অভিপ্রায় নিয়ে নির্বাচনী মাঠে দৌড়ঝাপ করছেন। কিন্তু তারমানে এই নয় যে, তিনি নিজের প্রতীকে ভোট চাইতে গিয়ে অন্য একজন প্রার্থীর বিরুদ্ধাচরণ করবেন। ঐ প্রার্থীকে ভোট না দিতে জনগণকে উৎসাহিত করছেন তিনি। উনার মনে রাখা উচিত ছিল, যে প্রার্থীর বিরুদ্ধাচরণ করছেন তিনি করছেন, তিনি একাধিকবারের একজন সম্মানীত সংসদ সদ্যস। উপরন্তু, জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি। সর্বপরি তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের একজন সম্মানিত নেতা ও একনিষ্ট কর্মী। এমপি ফারুক চৌধুরীর মতো একজন নৌকা প্রতীকের প্রার্থীকে ভোট না দেবার জন্য জনগণকে উৎসাহ প্রদান করা মানে, সেটি প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষাভাবে নৌকা তথা বর্তমান সফল সরকারের রাজনৈতিক প্রতীককে না বলার সমতুল্য। তিনি আকুতি মিনতি করে নিজের ইশতেহার সকলের সামনে তুলে ধরে নিজের প্রতীকে ভোট চাইতে পারে। কিন্তু, কখনোই বলা উচিৎ নয় যে, উমুক প্রার্থীকে ভোট দেবেন না। বিষয়টি শুধু অজ্ঞতাই নয়, হিংসাবিদ্বেষ সমতুল্য রাজনীতির একটি অংশ। আর যে ব্যক্তির মধ্যে এমন হিংসা পরায়নতা থাকবে তিনি অপরের স্বার্থ আর অধিকার পূরণে কিভাবে কাজ করবেন। তিনি তো উচ্চশিক্ষিত একজন সেলিব্রেটি। এর পাশাপাশি তিনি এখন নিজেকে স্থানীয় জনপ্রতিনিধির সাড়িতে দেখতে চান। তো, এমন গুরুত্বপূর্ণ ও দায়িত্বশীল একটি পদের কোন ব্যক্তি যদি ক্ষমতা পাবার আগেই পরোনিন্দা করে বেড়ান তবে তো বিষয়টি কেমন জানো গোলমেলে লাগে বলে মন্তব্য গোদাগাড়ী পৌর এলাকার স্থানীয় ব্যক্তি, ভোটার ও সাধারণ ব্যবসায়িদের।
বিএনপির এমপি আমিনুল ইসলামের পদত্যাগের পর শূন্য হওয়া চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ আসনের উপ-নির্বাচনকে কেন্দ্র করেও গণসংযোগ ও পথসভা শুরু করেছিল চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহি। তার হঠাৎ এমন পদক্ষেপে মিশ্র ও বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছিল সেখানকার আওয়ামী লীগের তৃণমূল নেতার মধ্যে। বছরের পর বছর ঢাকার ফ্লিম ইন্ড্রাস্টিতে কাজ করা একজন সেলিব্রেটি নিজ জন্মস্থান রেখে অন্য একটি অঞ্চলে এসে সংসদ সদস্যের পদে নির্বাচন করবে ? বিষয়টি তখন থেকেই প্রশ্নবিদ্ধ রুপ নিয়েছিল স্থানীয়দের কাছে বলে মন্তব্য গোদাগাড়ীর বাসিন্দাদের। কখনো তিনি উপনির্বাচনে আগ্রহ দেখাচ্ছেন, আবার কখনোবা জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নাম লিখিয়েছেন। বিষয়টি কেমন জানো দৌদুল্যমানবস্থা।
সরেজমিনে গিয়ে দেখাগেছে, হাতেগোণা কয়েকজনকে নিয়ে অর্ধকোটি মূল্যের পাজারো জিপে করে মাহিয়া মাহি তার নির্বাচনী প্রচার প্রচারণা আর গণসংযোগ করছেন। কোথাও একটু দাড়াচ্ছে; আবার কোথাওবা অন্যকে দিয়ে বিতরণ করছেন প্রতীক সম্বলিত লিফলেট। গণসংযোগে মাহির আচরণ ও কথাবার্তা নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন গোদাগাড়ীর কয়েকজন মুরুব্বী, সম্মানীত ব্যক্তি ও ফুটপাতের ব্যবসায়ীরা। তাঁদের দেয়া তথ্যমতে, মাহিয়া মাহি বেশকয়েকজন যুবক নিয়ে আমাদের সামনে এসে সামাল না দিয়ে অমলিন সূরে চাইছেন ভোট। তার ভোট চাওয়ার স্ট্যাইলটা একেবারেই অগ্রহণযোগ্য বলে মন্তব্য তাদের। তারা বলেন, মাহি আমাদের সামনে এসে বলেন, ‘ভোট ট্রাকে দিবেন। কিসে দিবেন ? ট্রাকে ! কাকে দিবেন ? ট্রাককে দিবেন! আর আমাকে না দিলে ফারুককে ভোট দিবেন না! এমন ধরণের এ্যাটিচিউট আমরা কখনোই কোন প্রার্থীর মধ্যে লক্ষ্য করিনি বলেও জানান স্থানীয়রা। তবে, তার জন্মস্থান নাচোল এলাকার আদিবাসি (সাওতাল) দের সাথে মাহি নাকি কুব সাবলীল ও বন্ধুসুলভ আচরণ করেছে বলেই শুনেছি। কিন্তু গোদাগাড়ীতে এসে কেনো এমন আচরণ বলে প্রশ্ন ছুড়ে দিলেন মন্তব্যকারীরা।
সূত্রমতে, মাহিয়া মাহি রাজশাহীর তানোর উপজেলার মুন্ডুমালায় তার নানাবাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। পারিবারিক নাম শারমিন আক্তার নিপা। তার পিতার নাম আবু বকর এবং মাতা দিলারা ইয়াসমিন। শিক্ষা আর পেশাগত জীবনের প্রায় পুরোটাই কাটিয়েছেন ঢাকাতে। তিনি ঢাকা উত্তরা হাইস্কুল থেকে মাধ্যমিক ও ঢাকা সিটি কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক সম্পন্ন করেন। এছাড়াও শান্ত-মারিয়াম ইউনিভার্সিটি অব ক্রিয়েটিভ টেকনোলজিতে ফ্যাশন ডিজাইনিংয়ের উপর পড়াশুনা করেছেন।
এবিষয়ে ট্রাক প্রতীকের প্রার্থী মাহিয়া মাহির কাছে জানতে চাইলে তিনি পত্রিকার প্রতিনিধিকে বলেন, উনাকে ভোট দিতে নিষেধ করাতে আমার দোষ কোথাই। ভোটারদেরকে নিষেধ না করে সুন্দর ও সাবলীল ভাষাতে নিজের প্রতীকের জন্য ভোট চাওয়াটাই কি ভাল নয়? কথার জবাবে মাহি কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বলেন, ধন্যবাদ। তারপর অপরপ্রান্ত থেকে সেলফোন সংযোগটি কেঁটে দেন তিনি।