আর্কাইভ কনভাটার ঢাকা, শনিবার, নভেম্বর ২৩, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
logo

সূরা লাহাবে আবু লাহাবের করুণ পরিণতি

Abu Lahab


অনলাইন ডেস্ক প্রকাশিত:  ২২ নভেম্বর, ২০২৪, ০৬:৫৩ পিএম

সূরা লাহাবে আবু লাহাবের  করুণ পরিণতি
সূরা লাহাব পবিত্র কোরআনের ১১১ নম্বর সূরা। এর আয়াত সংখ্যা পাঁচ। সূরাটি মক্কায় অবতীর্ণ এবং কোরআনের ত্রিশতম পারায় অবস্থিত।

সূরা লাহাবের শানে নুযুল

আল্লাহ তায়ালা যখন নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওপর এই আয়াত নাজিল করলেন- (وَأَنْذِرْ عَشِيرَتَكَ الْأَقْرَبِينَ) ‘আর আপনি আপনার গোত্রের নিকটাত্মীয়দেরকে ভীতি প্রদর্শন করুন।’ (সূরা আশ-শু'আরা, আয়াত, ২১৪) তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাফা পর্বতে আরোহণ করে কোরাইশ গোত্রের লোকদের ডাক দিলেন।


ডাক শুনে কোরাইশ গোত্র পর্বতের পাদদেশে একত্রিত হল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, যদি আমি বলি যে, একটি শত্রুদল ক্রমশই এগিয়ে আসছে এবং সকাল বিকাল যে কোনো সময় তোমাদের ওপর ঝাপিয়ে পড়বে, তবে তোমরা আমার কথা বিশ্বাস করবে কি? 

সবাই একবাক্যে বলে উঠল, হ্যাঁ, অবশ্যই বিশ্বাস করব। এরপর তিনি বললেন, আমি (শিরক ও কুফরের কারণে আল্লাহর পক্ষ থেকে নির্ধারিত) এক ভীষণ আজাব সম্পর্কে তোমাদেরকে সতর্ক করছি। এ কথা শুনে আবু লাহাব বলল, ধ্বংস হও তুমি, এজন্যেই কি আমাদেরকে একত্রিত করেছ? একথা বলে সে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে পাথর মারতে উদ্যত হল। এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে সূরা লাহাব অবতীর্ণ হয়। (বুখারি, হাদিস, ৪৯৭১, ৪৯৭২, মুসলিম, হাদিস, ২০৮)

সূরা লাহাব

بّتَبَّتۡ یَدَاۤ اَبِیۡ لَہَبٍ وَّتَبَّ ؕ ١ مَاۤ اَغۡنٰی عَنۡہُ مَالُہٗ وَمَا کَسَبَ ؕ ٢ سَیَصۡلٰی نَارًا ذَاتَ لَہَبٍ ۚۖ ٣ وَّامۡرَاَتُہٗ ؕ  حَمَّالَۃَ الۡحَطَبِ ۚ ٤ فِیۡ جِیۡدِہَا حَبۡلٌ مِّنۡ مَّسَدٍ

সূরা লাহাব অর্থ :

আবু লাহাবের দু’হাত ধ্বংস হোক এবং সে নিজে ধ্বংস হয়েই গেছে। তার সম্পদ ও তার উপার্জন তার কোন কাজে আসেনি। অচিরেই সে লেলিহান আগুনে প্রবেশ করবে। অচিরেই সে লেলিহান আগুনে প্রবেশ করবে। গলদেশে মুঞ্জ (তৃণ বিশেষ)-এর রশি লাগানো অবস্থায়। 

সূরা লাহাবে আবু লাহাবের করুণ পরিণতির কথা

আবু লাহাবের আসল নাম ছিল আবদুল উযযা। সে ছিল আবদুল মুত্তালিবের অন্যতম সন্তান। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের চাচা। গৌরবর্ণের কারণে তার ডাক নাম হয়ে যায় আবু লাহাব। কারণ, ‘লাহাব’ বলা হয় আগুণের লেলিহান শিখাকে। লেলিহান শিখার রং হচ্ছে গৌরবর্ণ। সে অনুসারে আবু লাহাব অর্থ, গৌরবর্ণবিশিষ্ট। পবিত্র কোরআন তার আসল নাম বর্জন করেছে। কারণ, সেটা মুশরিকসুলভ। এছাড়া আবু লাহাব ডাক নামের মধ্যে জাহান্নামের সাথে বেশ মিলও রয়েছে। কারণ, জাহান্নামের অগ্নির লেলিহান শিখা তাকে পাকড়াও করবে। সে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর কট্টর শত্রু ও ইসলামের ঘোর বিরোধী ছিল।

সে নানাভাবে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে কষ্ট দিতো। তিনি যখন মানুষকে ঈমানের দাওয়াত দিতেন, তখন সে সাথে সাথে গিয়ে তাকে মিথ্যাবাদী বলে প্রচার করত। 

এই সূরার প্রথম আয়াতে নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়াসাল্লাম ও ইসলামের অগ্রযাত্রাকে ব্যাহত করা আবু লাহাবের করুণ পরিণতির কথা বর্ণনা করা হয়েছে। বলা হয়েছে, আবু লাহাবের সঙ্গে মিলে ইসলামের বিরোধিতা করা বড় বড় কুরাইশ নেতারা বদর যুদ্ধে নিহত হয়। এ পরাজয়ের খবর মক্কায় পৌছতেই আবু লাহাব মর্মাহত হয়ে পড়ে।

কয়েক দিন পরেই সে এক প্রকার চর্মরোগে আক্রান্ত হল; যে রোগে দেহে প্লেগের মত গুটলি প্রকাশ পায়। সংক্রমণের ভয়ে পরিবারের লোকজন তাকে নির্জন জায়গায় ফেলে রেখে যায়। এই রোগই তাকে মৃত্যুর গ্রাস বানালো। তিন দিন পর্যন্ত তার লাশ এমনিই পড়ে ছিল। তা পচে দুর্গন্ধ ছড়াতে থাকে। ব্যাধি ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কায় তার ছেলেরা চাকর বাকরের মাধ্যমে তার দেহ কে দাফন করে দেয়।

কোনো কাজে আসেনি সন্তান-সম্পদ

হজরত ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহিস সালাম যখন মানুষকে ইসলামের পথে আহ্বান করছিলেন এবং তাদের পরকালের আজাব সম্পর্কে জানাচ্ছিলেন, তখন আবু লাহাব বলেছিলো, আমার এই ভাতিজা যেই আজাবের কথা বলছে তা যদি সত্য হয় তাহলে আমি আমার সম্পদ ও সন্তান সন্তুতির মাধ্যমে নিজেকে রক্ষা করবো। 

আবু লাহাবের এই কথার প্রেক্ষিতে আয়াতে বলা হয়েছে, যখন আল্লাহ তায়ালার আজাব তাকে পাকড়াও করলো তখন এসব কার কোনো কাজে আসেনি। এরপরের আয়াতে বলা হয়েছে, কেয়ামতে অথবা মৃত্যুর পর কবরেই সে এক লেলিহান অগ্নিতে প্রবেশ করবে।

আবু লাহাবের স্ত্রীর পরিণতি

আবু লাহাবের স্ত্রীর নাম ছিল ‘আরওয়া’। সে ছিল আবু সুফিয়ানের বোন ও হরব ইবনে উমাইয়্যার কন্যা। তাকে ‘উম্মে জামীল’ বলা হতো। আবু লাহাবের মতো তার স্ত্রীও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও ইসলাম বিদ্বেষী ছিল। সে এ ব্যাপারে তার স্বামীকে সাহায্য করত। আয়াতে ব্যক্ত করা হয়েছে যে, এই হতভাগিনীও তার স্বামীর সাথে জাহান্নামে প্রবেশ করবে।

শেষ আয়াতে তার শাস্তি ও পরিণতির আরেকটি ধরনের কথা বলা হয়েছে। সাঈদ ইবনুল মুসাইয়েব বলেন, সে একটি অতি মূল্যবান হার গলায় পরতো এবং বলতো, লাত ও উযযার কসম, এ হার বিক্রি করে আমি এর মূল্য বাবদ পাওয়া সমস্ত অর্থ মুহাম্মাদের বিরুদ্ধে শত্রুতামূলক কাজ করার জন্য ব্যয় করবো। (ইবন কাসির)

মুফাসসিরদের মতে, তার গলায় আগুনের রশি পরানো হবে। তা তাকে তুলে আগুনের প্রান্তে উঠবে। আবার তাকে এর গর্তদেশে নিক্ষেপ করবে। এভাবে তার শাস্তি চলতে থাকবে।

(ইবন কাসির, তাফসিরে মাআরিফুল কোরআন, ৮/৮৮৯)