আর্কাইভ কনভাটার ঢাকা, বৃহস্পতিবার, নভেম্বর ২১, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
logo

কৃষকদের দিবস উদযাপন এবং সামগ্রিক দায়বদ্ধতা

Farmers Day Celebration


অনলাইন ডেস্ক প্রকাশিত:  ২১ নভেম্বর, ২০২৪, ০৯:৩৭ এএম

কৃষকদের দিবস উদযাপন এবং সামগ্রিক দায়বদ্ধতা

বাংলাদেশ কৃষি প্রধান দেশ। এদেশের ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ মানুষ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে কৃষির ওপর নির্ভরশীল। দেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি পেছনে কৃষির অবদান অনেক। আমাদের মুখে অন্ন তুলে দিতে দিন-রাত এক করে পরিশ্রম করেন কৃষকরা। মাথার ঘাম পায়ে ফেলে ফসল ফলান। এক একটা সবজি বা ফসল তাঁদের কাছে নিজের সন্তানের মতো। তাঁদের জন্যই আমরা ভালো–মন্দ খেতে পারি। কিন্তু আমাদের অন্নের জোগাড় করতে গিয়ে অনেক সময়ে তাঁদেরই দু’মুঠো ভাত জোটে না। তবুও নিজের কাজ চালিয়ে যান তাঁরা। সেই কৃষকদের আজ ধন্যবাদ জানানোর একটি দিবস উদযাপন করা দেশের সামগ্রিক দায়বদ্ধতার মধ্যে পড়ে।

স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশের ধানের উৎপাদন তিন গুণেরও বেশি, গম দ্বিগুণ, সবজি পাঁচ গুণ এবং ভুট্টার উৎপাদন বেড়েছে ১০ গুণ। দুই যুগ আগেও দেশের অর্ধেক এলাকায় একটি ও বাকি এলাকায় দুটি ফসল হতো। বর্তমানে দেশে বছরে গড়ে দুটি ফসল হচ্ছে। পরিশ্রমী কৃষক ও কৃষি বিজ্ঞানীদের যৌথ প্রয়াসেই এ সাফল্য অর্জন সম্ভব হয়েছে স্বাধীনতার পর থেকে দেশে প্রতি হেক্টর জমিতে দুই টন ধান উৎপাদিত হতো। এখন হেক্টরপ্রতি উৎপাদন হচ্ছে চার টনেরও বেশি। হিসাব করলে তা ছয় টন আর এভাবেই প্রধান খাদ্যশস্যের উৎপাদন বাড়ানোর ক্ষেত্রে বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় দেশের তালিকায় উঠে এসেছে বাংলাদেশের নাম। দেশের এই সমৃদ্ধি পেছনে কৃষকের পরিশ্রমের অবদান অনস্বীকার্য ।

পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে কৃষকদের জন্য একটি দিবস রয়েছে। মূলত এই দিনটিতে দেশ ও জাতির প্রতি কৃষকের অবদানের জন্য কৃতজ্ঞতা জানানো হয়। বাংলাদেশে এ ধরনের কোন দিবস নেই ! ২৩ ডিসেম্বর ভারতে ন্যাশনাল ফার্মারস ডে বা কৃষান দিবস পালন করা হয়। এ দিবসটি পাকিস্তানে ১৮ ডিসেম্বর, আফগানিস্তানে ২২ মার্চ, ঘানায় ডিসেম্বরে প্রথম শুক্রবার, দক্ষিন কোরিয়ায় ১১ নভেম্বর, ভিয়েতনামে ১৪ অক্টোবর, জাম্বিয়াতে আগস্ট মাসের প্রথম সোমবার পালন করা হয়। আর আমেরিকাতে ন্যাশনাল ফার্মারস ডে পালন করা হয় প্রতিবছর ১২ অক্টোবর। পৃথিবীর উন্নত দেশগুলোর মধ্যে চীন, আমেরিকা ও ভারতসহ বিভিন্ন দেশে রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে ‘জাতীয় কৃষক দিবস’ পালন করা হয়। মূলত এই দিনটিতে দেশ ও জাতির প্রতি কৃষকের অবদানের জন্য কৃতজ্ঞতা জানানো হয়।

বাংলাদেশে যদিও দেশে পহেলা অগ্রহায়ণ জাতীয় কৃষি দিবস এবং ১৩ ফেব্রুয়ারি কৃষিবিদ দিবস উদযাপন করা হয়। নবান্নের সাথে সংগতি রেখে ২০০৮ সাল থেকে পহেলা অগ্রহায়ণ জাতীয় কৃষি দিবস পালনের ঘোষণা দেয়া হয়। কিন্তু এটিও সারাদেশে ব্যাপকভাবে পালিত হতে দেখা যায় না ! কৃষকরা দেশের মেরুদণ্ড। তাঁরা না ফসল ফলালে আজ দেশ এই পর্যায়ে এসে দাঁড়াত না। অন্য কাজের বদলে আমাদের ফসল ফলাতে হত। সামান্য অর্থের বিনিময়ে যাঁরা আমাদের এত বড়, সব চেয়ে মূল্যবান পরিষেবা দিয়ে থাকেন, তাঁদের অনেক সময়েই অবহেলায় থাকতে হয়। কৃষক বা চাষির ঘরের ছেলে-মেয়েরা আর পাঁচটা আর্থিক ভাবে স্বচ্ছল পরিবারের মতো বড় হয় না। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে অভাবেই সংসার চলে এঁদের। এই ফসল ফলানো বা চাষির শ্রমের পিছনে অনেক কষ্ট, অনেক স্ট্রাগল থাকে, যা হয় তো জানাই যায় না। এই নেপথ্যে থাকা নায়কদের আজ কুর্নিশ জানানোর এখনই সময়।

কৃষিপ্রধান এই দেশে কৃষকদের জন্য একটি দিবস উদযাপন করা দেশের সামগ্রিক দায়বদ্ধতার মধ্যে পড়ে। বাংলাদেশের মতো ছোট একটি ভূখন্ড থেকে ১৮০ মিলিয়ন জনগোষ্ঠীর খাদ্যের যোগান দেয়া চারটি খানি কথা নয়। যারা এই ক্ষুধার অন্ন যোগায় তাদের সম্মানিত করলে জাতি সমৃদ্ধ হবে।