আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী ২৭টি দলের মধ্যে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টি (জাপা) সর্বোচ্চ ব্যয় সুবিধা পাবে। এক্ষেত্রে দল দুটি সাড়ে চার কোটি টাকা করে ভোটে ব্যয় করতে পারবে। দলগুলোর দেওয়া প্রার্থী সংখ্যা ও গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ বিশ্লেষণ করে এ তথ্য পাওয়া গেছে। নির্বাচন কমিশন (ইসি) সূত্রগুলো জানিয়েছে, ইতোমধ্যে বিষয়টি দলগুলোকে অবহিত করা হয়েছে। এদিকে সম্প্রতি অন্য এক নির্দেশনায় রিটার্নিং কর্মকর্তাদের মাধ্যমে প্রার্থীদের অবহিত করা হয়েছে, ভোটারপ্রতি প্রার্থীর সর্বোচ্চ ব্যয় হবে ১০ টাকা। তবে ভোটার সংখ্যা যাই হোক না কেন মোট ব্যয় ২৫ লাখ টাকার বেশি হবে না। অন্যদিকে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) অনুযায়ী, যে দল থেকে সর্বোচ্চ ৫০ জন প্রার্থী নির্বাচনে অংশ নেবে, সে দল সর্বোচ্চ ৭৫ লাখ টাকা ব্যয় করতে পারবে। ৫১ থেকে ১০০ জন প্রার্থীর জন্য সর্বোচ্চ দেড় কোটি টাকা ব্যয় করা যায়। ১০১ থেকে ২০০ প্রার্থীর জন্য তিন কোটি টাকা এবং দুই শতাধিক প্রার্থী দিলে সর্বোচ্চ সাড়ে চার কোটি টাকা কোনো দল ব্যয় করতে পারে। ইসি সচিব মো. জাহাংগীর আলম জানান, এবার ২৭টি দল সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী দিয়েছে। আদালতের নির্দেশনা এলে সংখ্যা পরিবর্তন হতে পারে। বর্তমানে নির্বাচনে মোট এক হাজার ৮৯৫ প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী রয়েছেন। রাজনৈতিক দলের এক হাজার ৫১৩ জন এবং স্বতন্ত্র থেকে ৩৮২ প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। দলগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি প্রার্থী দিয়েছে জাতীয় পার্টি- ২৬৫ জন, দ্বিতীয় স্থানে আওয়ামী লীগ- ২৬৩ জন। দল দুটি সাড়ে চার কোটি টাকা করে ব্যয় করতে পারবে। তৃণমূল বিএনপি ১৩৩ জন ও ন্যাশনাল পিপলস পার্টি ১২২ প্রার্থী দিয়েছে। এ দল দুটি সর্বোচ্চ তিন কোটি টাকা করে ব্যয় করতে পারবে। জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল- জাসদের ৬৪ জন, বাংলাদেশ কংগ্রেসের ৯৫ জন, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের ৫৪ জন, বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির ৭৯ জন, বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোটের ৬৩ প্রার্থী রয়েছেন। এ পাঁচটি দলের প্রতিটি সর্বোচ্চ দেড় কোটি টাকা ব্যয় করতে পারবে। অন্যান্য দলের মধ্যে বিকল্প ধারা বাংলাদেশ ১০ জন, বাংলাদেশের সাম্যবাদী দল (এম.এল) ৪ জন, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি ১৬ জন, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন ১১ জন, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি ৫ জন, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট ৩৭ জন, ইসলামী ফ্রন্ট বাংলাদেশ ৩৯ জন, ইসলামী ঐক্যজোট ৪২ জন, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ ২৯ জন, গণফোরাম ৯ জন, গণফ্রন্ট ২১ জন, জাকের পার্টি ২১ জন, জাতীয় পার্টি-জেপি ১৩ জন, বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশন ৩৮ জন, বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ) ৫ জন, বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট-বিএনএফ ৪৫ জন, বাংলাদেশ মুসলিম লীগের ৪ জন, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি ২৬ জনকে প্রার্থী করেছে। এ ১৮ দলের প্রতিটি সর্বোচ্চ ব্যয় করতে পারবে ৭৫ লাখ টাকা। আরপিও অনুযায়ী, প্রার্থীপ্রতি দল সর্বোচ্চ দেড় লাখ টাকা ব্যয় করতে পারবে। এক্ষেত্রে নির্বাচনী প্রচারে দলীয় প্রধানের ভ্রমণ ব্যয় এতে যোগ হবে না। নির্বাচনী প্রচার, পোস্টার প্রভৃতি খাতে ব্যয় করতে পারে দলগুলো। আর চাঁদা ও অনুদান অন্যান্য খাত থেকে আয় করতে পারে। তহবিলের জন্য দল ২০ হাজারের বেশি দান, চেক ছাড়া নিতে পারবে না। গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের ৪৪ সিসিসি-বিধি অনুযায়ী, ভোটের ফলাফল গেজেটে আকারে প্রকাশের পর ৯০ দিনের মধ্যে দলগুলোর নির্বাচনী ব্যয়ের হিসাব জমা দেওয়ার বিধান রয়েছে। এটি অমান্য করলে ১০ লাখ টাকা জরিমানা, এমনকি দলের নিবন্ধনও বাতিল করতে পারে ইসি। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ সর্বোচ্চ ব্যয় সুবিধা পেয়েছিল। সে সময়ও প্রার্থীর সর্বোচ্চ ব্যয় ২৫ লাখ টাকা এবং ভোটার প্রতি ব্যয় ১০ টাকা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছিল। আরপিও অনুযায়ী, নির্বাচিতদের গেজেট প্রকাশের ৩০দিনের মধ্যে ব্যয়ের হিসাব সব প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীকে দিতে হয়। কোনো প্রার্থী নির্বাচনী ব্যয়ের হিসাব নির্ধারিত সময়ে মধ্যে নির্বাচন কমিশনে জমা না দিলে, তার বিরুদ্ধে জরিমানা ও মামলার দেওয়ার বিধান রয়েছে। ২০১৪ সালের দশম সংসদ নির্বাচনের পর জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ যথাসময়ে ব্যয়ের হিসাব না দেওয়ায় তার বিরুদ্ধে মামলা করেছিল ইসি। সে সময় ভোটারপ্রতি ব্যয় ধরা হয়েছিল ৮টাকা। যদিও সেবারও সর্বোচ্চ ব্যয় ছিল ২৫ লাখ টাকা। ২০০৮ সালের নবম সংসদ নির্বাচনের সময় প্রার্থীর ভোটার প্রতি গড় ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছিল ৫ টাকা। আর সর্বোচ্চ ব্যয় নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছিল ১৫ লাখ টাকা। আগামী ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।