× মূলপাতা দেশের কথা দশদিক রাজনীতি অর্থনীতি তথ্যপ্রযুক্তি রূপালিকথা হৃদয়ে একাত্তর
আজ মঙ্গলবার, ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৪

দেড় বছরেও দেখা নেই ট্রেনের!

প্রকাশিত - ২৮ অক্টোবর ২০২১ ১৪:৪১
দেড় বছরেও দেখা নেই ট্রেনের!

রেজাউল করিম রেজা, ছাতক:  সিলেট-ছাতক রেলপথটি সচল হয়নি দেড় বছরেও। কবে এ রুটে ট্রেন চলাচল করবে-তাও নিশ্চিত করে বলতে পারছেন না সংশ্লিষ্ট কেইউ। ফলে দীর্ঘদির ধরে অব্যাবহৃত অবস্থায় পড়ে থাকা রেলওয়ে লাইনের স্লিপার, নাট-বল্টু যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, তেমনি এ রুটে চলাচলকারী ট্রেনের যাত্রীরাও পড়েছেন চরম ভোগান্তিতে। এ নিয়ে চরম ক্ষুব্ধ তারা।
সিলেট রেলস্টেশনের ব্যবস্থাপক মো. খলিলুর রহমান জানিয়েছেন, করোনার কারণেই সিলেট-ছাতকে চলাচল করা রেল বন্ধ রয়েছে। আবার চালু হবে। তবে কবে নাগাদ চালু হবে, সে রকম কোনো তথ্য তাঁর কাছে নেই। এ রুটে চলাচল করা ট্রেন সিলেট রেলওয়ে স্টেশনেই আছে জানিয়ে তিনি বলেন, আশা করছি, অচিরেই চালু হয়ে যাবে।’
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ছাতক শিল্পনগরী উপজেলা হিসেবে বিখ্যাত। ব্রিটিশ আমল থেকে এই উপজেলায় ব্যবসা-বাণিজ্য চলে আসছে। এ হিসেবে ১৯৫৪ সালে সিলেট-ছাতক ৩৫ কিলোমিটার রেলপথ স্থাপিত হয়। ছাতকবাজার রেলস্টেশন থেকে প্রতিদিন চারটি ট্রেন সিলেটে যাতায়াত করতো। এছাড়া মালবাহী ৪টি ট্রেনে সিমেন্ট, পাথর, চুনাপাথর, তেজপাতা ও কমলাসহ বিভিন্ন ধরনের কাঁচামাল কম খরচে পরিবহন করা হতো। 
১৯৮২ সালে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা, আয় ও অন্যান্য অর্জনের দিক দিয়ে দেশের মধ্যে সর্বোত্তম রেলস্টেশন হিসেবে এটি স্বীকৃতি অর্জন করেছিল। রেলপথে এ অঞ্চলের পণ্য দেশের বিভিন্ন স্থানে পরিবহন করে আয়ের ক্ষেত্রে চট্টগ্রাম অঞ্চলের মধ্যে কয়েকবার প্রথম স্থান অধিকারের গৌরব অর্জন করেছিল।

কিন্তু ২০২০ সালের ২৩ মার্চ থেকে বন্ধ রয়েছে ছাতক-সিলেট রুটে যাত্রীবাহী ট্রেন। করোনা ভাইরাসের কারণে সারাদেশের ন্যায় এ রেলপথেও ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে পড়ে। কিন্তু বর্তমানে দেশে সরকারি নির্দেশে ট্রেন চলাচল চালু হলেও এ রেলপথটি আজও বন্ধ রয়েছে। 
একারণে যাত্রী চলাচলে এখানের লোকজনকে গুনতে হচ্ছে অধিক ভাড়া। একজন যাত্রীর সড়ক পথে সিলেট যেতে গাড়ী ভাড়া ৮০-১৩০ টাকা গুনতে হচ্ছে। আর রেলপথে ছাতক বাজার স্টেশন থেকে টিকেট কেটে সিলেট পৌঁছতে লাগে মাত্র ১২ টাকা। তাই স্বল্প ভাড়ায় আরামদায়ক ভ্রমণ হিসেবে সাধারণ যাত্রীদের কাছে ট্রেনই ছিলো যোগাযোগ মাধ্যম। কম খরচে মালামালও পরিবহন করা যেতো।
এই রেলপথে আবার কবে ট্রেন চলবে এমন প্রশ্নের উত্তর মিলছে না কর্তৃপক্ষের কাছে।
ট্রেন বন্ধ থাকার কারণে স্টেশন মাস্টারসহ দায়িত্ব প্রাপ্তরা কেউই স্টেশনে আসেন না। মাঝে মধ্যে সরকারি মালবাহী ট্রেন যাতায়াতের সময় একজন কর্মচারী এসে তদারকি করে আবার চলে যায়। এছাড়া ছাতক-সিলেট রেলপথের আফজলাবাদ, সৎপুর ও খাদাঞ্চি স্টেশন ও আশপাশ এলাকায় অপরাধীরা তাদের নিরাপদ স্থান হিসেবে বেছে নিয়েছে।
বিশেষ করে আফজলাবাদ স্টেশনে দিন-রাত সমানতালে চলে আসছে জুয়া খেলা, মদ ও গাজা ব্যবসা-সেবন। ছাড়া বন্ধ থাকা এ রেলপথে চরানো হচ্ছে গবাদিপশু।বিশ্বনাথের কামালবাজার থেকে খাজাঞ্চি পর্যন্ত এ অবস্থা দেখা গেছে। পুরো রেলপথ এখন গো চারণক্ষেত্র। এদিকে ছাতকের উপকণ্ঠ গোবিন্দগঞ্জ থেকে কামালবাজার ও লামাকাজির আতাপুর 

রেলক্রসিং অব্যবহৃত থাকতে থাকতে অনেকটা অকেজো অবস্থায় পড়ে আছে।
ট্রেন চলাচল না করার কারণে এমনটা হয়েছে বলে জানিয়েছেন রেলপথের আশপাশের এলাকার বাসিন্দারা। রেললাইনে গরুর রশি বেঁধে গো-খাদ্য সংগ্রহে ব্যস্ত খাজাঞ্চির বাসিন্দা কৃষক মনির উদ্দিন বলেন, ‘সব খানও রেল চলের। আমরার ইখানো রেল আর চলের না দেখি ই কাম আমরা করছি। রেল চললে তো খান্দাত (কাছাকাছি) আইতাম না।’
স্থানীয় বাসিন্দা সামছুল ইসলাম বলেন, ‘প্রতিদিন সিলেট শহরে রিকশা চালিয়ে ট্রেনে ছাতক ফিরতাম। অল্প ভাড়ায় নিরাপদে যাতায়াত করা যেত। ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকায় বেশি টাকা দিয়ে যাতায়াত করতে হচ্ছে।’
ছাতক রেল স্টেশনের পাশে থাকা ব্যবসায়ী রফিক মিয়া বলেন, ‘ট্রেন আসলে দোকানে কেনাবেচা বাড়ে। এখন ট্রেনও আসে না, কেনাবেচাও তেমন নাই। পরিবার পরিজন নিয়ে খুব বিপদে আছি। দোকান ভাড়ার টাকাও উঠছে না।'স্থানীয় বাসিন্দা মনির মিয়া বলেন, দেড় বছর ধরে ট্রেন বন্ধ। এতে অনেক জায়গায় রেলপথ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
ছাতক রেল স্টেশনের দায়িত্ব থাকা কেয়ারটেকার মঞ্জু মিয়া বলেন, করোনার কারণে ছাতকে ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়েছিল। ট্রেন চলাচলের জন্য কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। তাদের কাছ থেকে স্পষ্টত কোনো উত্তর পাওয়া যায়নি। আমরাও বলতে পারছি না এই রুটে আবার কবে ট্রেন চলবে।
ছাতক রেলস্টেশন সূত্র জানায়, মুক্তিযুদ্ধের সময় আগস্ট মাস থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত একটানা চার মাস বন্ধ ছিল রেল চলাচল। এরপর একটানা দেড় বছর রেল বন্ধ করোনাকালে। ছাতক রেলস্টেশন প্রতিষ্ঠার ৬৬ বছরে এই প্রথম একটানা দেড় বছর বন্ধ বলে জানিয়েছেন, ছাতক বাজার রেলওয়ে স্টেশনমাস্টার আবু নাসের মোহাম্মদ। 
তিনি বলেন, ‘ছাতক-সিলেট রুটে মাত্র একটি মেইল ট্রেন চলত। বর্তমানে সেটি বন্ধ থাকায় রেলে চলাচল করা মানুষ দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন। করোনার কারণে বন্ধ থাকার পর অন্য রুটে সব ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হয়েছে। আশা করছি, দ্রুতই এই রুটেও ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হবে।’