বাংলা আমাদের প্রাণের ভাষা। বাংলা ভাষায় আমরা কথা বলি, গান গাই, মনের ভাব প্রকাশ করি সকল সুখ-দুঃখ ভাগাভাগি করি। বাঙালি জনগণের ভাষা আন্দোলনের মর্মন্তুদ ও গৌরবোজ্জ্বল স্মৃতিবিজড়িত একটি দিন হিসেবে চিহ্নিত হয়ে আছে। এই বাংলা ভাষার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এবং ভাষার জন্য যাঁরা প্রাণ দিয়েছেন সেই সব বীর শহীদের সকলের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে ২১শে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে ঋদ্ধি বন্দ্যোপাধ্যায় মিউজিক একাডেমি তার স্টুডেন্টদের দিয়ে আয়োজন করেছেন একটি বিশেষ ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানের। এই অনুষ্ঠানে রামেন্দু মজুমদার, ফেরদৌসী মজুমদার থাকবেন। এছাড়া ইউরোপ, আমেরিকা, কানাডা, দুবাই, নাইরোবি, সিঙ্গাপুর, এছাড়া ইন্ডিয়ার বহু শহর এবং বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে ছাত্রছাত্রীরা যোগ দেবে। একাডেমির ৭০০ ছাত্র-ছাত্রীর মধ্যে কৃতী ছাত্র-ছাত্রীদের নিয়ে ২১শে ফেব্রুয়ারি ভারতের সময় রাত ৮টায় অনুষ্ঠানটি করা হবে, যার পরিকল্পনা ও নির্দেশনা ঋদ্ধি বন্দ্যোপাধ্যায় করবেন।
রবীন্দ্রনাথ-নজরুল-অতুলপ্রসাদ-দ্বিজেন্দ্রলাল-রজনীকান্ত। একসঙ্গে এই পঞ্চকবিকে নিয়ে তাঁর পথ শুরু ২০১১ সালে। সুর-লয়-ছন্দ তো ছোটবেলা থেকেই তাঁর মনে, প্রাণে।
অতুলপ্রসাদ সেনের গানের ভাবধারাকে উত্তরপ্রজন্মের জন্য সঠিক আঙ্গিকে পরিবেশনার মুন্সিয়ানা রয়েছে সঙ্গীতশিল্পী ঋদ্ধি বন্দ্যোপাধ্যায়ের মধ্যে। পঞ্চকবির গান, বাংলা কাব্যগীতি নিয়ে নিরন্তর চর্চা করেন ঋদ্ধি। বর্তমান প্রজন্মের কাছে অতুলপ্রসাদ সেন, দ্বিজেন্দ্রলাল রায়, রজনীকান্ত সেনের গানের পরিচিতি খুবই সীমিত। ঋদ্ধি এই কঠিন কাজটিই করে চলছেন বিগত ২২-২৩ বছর ধরে। দেশে ও বিদেশে। ঋদ্ধি বন্দ্যোপাধ্যায় মিউজিক একাডেমির এক ছাত্রী ঈশিতা কেনিয়া থেকে প্রথম আলোকে জানান, সে কেবল তাঁর ছাত্রীই নন, তাঁর গানের একজন মুগ্ধ শ্রোতাও। কেনিয়া থেকে জুমের মাধ্যমে অনলাইন ক্লাস করেন। তিনি বলেন, এই একাডেমির ঋদ্ধিদি এবং দেবজিত স্যারের তত্ত্বাবধানে বাংলা গানের প্রায় হারিয়ে যাওয়া ইতিহাস এবং বাংলা গানের কথা এবং সুরের যে অপুর্ব রত্ন ভাণ্ডার সকলের মাঝে ছড়িয়ে দেবার উদ্দেশে নিরন্তর কাজ করে চলেছেন অত্যন্ত সফলতার সাথে। বাংলা নাটকের গান, পুরাতনি গান, টপ্পা, পঞ্চকবির গান অনেকে শ্রোতাই শুনছেন এবং চর্চাও করছেন। ঋদ্ধি বন্দ্যোপাধ্যায় মিউজিক একাডেমির এই যে কর্মকাণ্ড, এই যে কর্মধারা সেটাকে অব্যাহত রেখেই ২১শে ফেব্রুয়ারি মাতৃভাষা দিবস পালন করবেন ডিজিটেল প্লাটফর্মে। সকলকে বাংলা গানের এই ধারাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার যে প্রয়াস, তাতে সকলকে সাথে থাকার আহ্বান জানান। তাঁর আরেক ছাত্রী শুভ্রা চৌধুরী বলেন, ঋদ্ধি বন্দ্যোপাধ্যায় নানাভাবে আমাদের উদ্বুদ্ধ করেন। তারই ফলশ্রুতি ২১শে ফেব্রুয়ারি ভাষা দিবসে উপলক্ষে আমাদের শ্রদ্ধাঞ্জলি বাংলা ভাষা দিবস। তিনি কবি শামসুর রহমানের কথায় বলেন, একুশের কৃষ্ণচূড়া আমাদের চেতনারই রং।
ঋদ্ধি বন্দ্যোপাধ্যায় মিউজিক একাডেমিতে পঞ্চকবির গান (রবীন্দ্রনাথ, দ্বিজেন্দ্র লাল, অতুলপ্রসাদ, রজনীকান্ত, নজরুল), পুরাতনী বাংলা গান নিধুবাবুর টপ্পাসহ, বাংলা থিয়েটারের গান, ছোটদের জন্য ভয়েস ট্রেনিং ও ছড়ার গান শেখানো হয়। প্রতিটি ক্লাসের সময়সীমা ১ ঘণ্টা জুমের মাধ্যমে শেখানো হয়। এখানে শুদ্ধ সুর, তাল, লয় এবং গানের পটভূমিকা নিয়ে শিক্ষার্থীদের ট্রেনিং দেয়া হয়।
আমাদের আর্কাইভ থাকাতে সেখান থেকে অথেনটিক তথ্যসূত্র ছাত্রছাত্রীরা পায়। যোগ্যরা নিজেদের প্লাটফর্ম পায় এখানে। তাদের সার্বিক উন্নতির চেষ্টা করা হয়। তাদের ডিজিটাল, রেকর্ড, ইউটিউব প্রোমোশন করা হয়। বিশেষ গুনগত মান যার আছে তার দায়িত্ব একাডেমি নেয়। বয়স্ক বিভাগ আছে, যারা বহুদিন গান ছেড়ে দিয়েছিলেন, এখন আবার নিজের প্যাশনে ফিরতে চাইছে তাদের বিশেষ ট্রেনিং দেয়া হয়। শিশু বিভাগ শুরু ৪ বছর থেকে। গুনী শিক্ষক আছেন এই বিভাগে। ভয়েস ট্রেনিং দিয়ে শুরু হয় তাদের শিক্ষা। ব্যক্তিগতভাবে সমস্ত বিভাগ ঋদ্ধি বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে দেখাশোনা করেন। এই লিংক এ গিয়ে ওয়েবসাইট দেখতে পারেন।