× মূলপাতা দেশের কথা দশদিক রাজনীতি অর্থনীতি তথ্যপ্রযুক্তি রূপালিকথা হৃদয়ে একাত্তর
আজ মঙ্গলবার, ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৪

প্রেমিকার বিয়েতে পেটপুরে বিরিয়ানি খাওয়ার পর

প্রকাশিত - ০১ মার্চ ২০২২ ১০:৫৭
প্রেমিকার বিয়েতে পেটপুরে বিরিয়ানি খাওয়ার পর

আমি সাধারণ কোনো প্রেমিক হতে চাইনি। আমি চেয়েছি আর দশটা প্রেমিক থেকে ভিন্ন কেউ হই। তাই আমার সঙ্গে নিতুর প্রেমটা ছিল এমন—চলছে, তবে আগামাথা নেই।

আমি সাধারণ কোনো প্রেমিক হতে চাইনি। আমি চেয়েছি আর দশটা প্রেমিক থেকে ভিন্ন কেউ হই। তাই আমার সঙ্গে নিতুর প্রেমটা ছিল এমন—চলছে, তবে আগামাথা নেই। সব প্রেমিক হাঁটু গেড়ে বসে প্রেমিকার হাত ধরে প্রস্তাব দেয়। আমাকে আর দশটা প্রেমিকের মতো হলে চলবে না। আমি হাঁটু গেড়ে বসে বলিনি ‘মন দাও’। নিতুর সামনে গিয়ে সরাসরি ওর চোখের দিকে তাকিয়ে বলেছি, ‘“আমি” তো “আমায়” প্রচণ্ড ভালোবাসি; আর “আমায়” “আমি”ও। কিন্তু আজকাল “আমায়” আমাকে ভালোবাসছে না। “তোমাকে” বাসছে। তাই “আমাকে”ও বাধ্য হয়ে “তোমাকে” বাসতে হচ্ছে।’ প্রেমিক-প্রেমিকা হলেই রাতভর ফোনে গুজুরগাজুর, ফুসুরফাসুর করতে হয়। সবাই-ই করে। আমি আর দশটা সাধারণ প্রেমিক নই। আমি রাত হলে নিতুকে ব্লক দিয়ে শুয়ে পড়তাম, সকাল হলে আনব্লক করতাম। প্রেমিক-প্রেমিকাদের দিনে দুই-তিনবার দেখা করার নিয়ম, আমি সময়-সুযোগ থাকার পরও সপ্তাহে একদিন দেখা করতাম। নিতু অভিমান করত, আমি আর দশটা সাধারণ প্রেমিকের মতো ওর অভিমান ভাঙানোর চেষ্টা করতাম না। উল্টো নিজেই অভিমান করে বসে থাকতাম।প্রেমিক-প্রেমিকাদের কথাবার্তায় বাচ্চা বাচ্চা-আদুরে-ওলে ওলে একটা ভাব থাকে। তারা দিনের অধিকাংশ সময় সংসার, বাচ্চাকাচ্চার নাম কিংবা বাসার জানালার পর্দা কী রঙের হবে, তা নিয়ে আলোচনা করে। আমি আর দশটা সাধারণ প্রেমিক নই। আমি নিতুর সঙ্গে দেখা হলে আলোচনা করতাম ট্রাম্প আর কিমের আন্তর্জাতিক পাগলামো নিয়ে। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন কিংবা তিস্তা নিয়ে মমতার চিন্তাভাবনা প্রসঙ্গে। নিতু কাঁধে মাথা রেখে হাই তুলতে তুলতে শুনত সব। সেদিন নিতুকে বলেছি, ‘আমাকে ডিস্টার্ব করবা না, আমি একটা বাংলা ছবি দেখছি। আরেকবার ফোন দিবা তো আমি তোমার আব্বাকে ফোন দিব। দিয়ে বলব, আপনার মেয়ে প্রেম করে বেড়াচ্ছে।’ সব প্রেমিক বিশেষ একটা দিবসে ফুল হাতে প্রেমিকার কাছে গিয়ে ভালোবাসি বলে কিংবা ভালোবাসাবাসি করে। আমি আর দশটা প্রেমিকের মতো কমন নই। আমি নিতুর কাছে ভালোবাসা দিবসে কোনো ফুলটুল নিয়ে যাইনি, কোনো ভালোবাসাবাসিও করিনি। উল্টো সেদিন নিতুকে বলেছি, ‘আমাকে ডিস্টার্ব করবা না, আমি একটা বাংলা ছবি দেখছি। আরেকবার ফোন দিবা তো আমি তোমার আব্বাকে ফোন দিব। দিয়ে বলব, আপনার মেয়ে প্রেম করে বেড়াচ্ছে।’ পৃথিবীর কোনো প্রেমিক ‘আব্বাকে বলে দিব’-টাইপের ধমক প্রেমিকাকে দিয়েছে কি না, আমার জানা নেই। আমি সাধারণ কোনো প্রেমিক নই। চুটিয়ে প্রেম করে সব প্রেমিক-প্রেমিকাই বিয়ে করার প্রস্তুতি নেয়। আমি যেহেতু কোনো কমন প্রেমিক নই, সেহেতু আমাকে এই সোজা পথে হাঁটলে চলবে না। বাঁকা পথ লাগবে। বাঁকা পথটার নাম হচ্ছে বিচ্ছেদ। আমি নিতুর আব্বাকে ফোন করলাম, খুলে বললাম সব। নিতুর আব্বা মনোযোগ দিয়ে সব শুনে ফোন রেখে দিলেন। আমি বড় করে একটা নিশ্বাস ফেললাম। নিতুর জন্য ছেলে দেখার কার্যক্রম আজ থেকেই শুরু হবে, নিতুকে শিগগিরই বিয়ে দেওয়া হবে। প্রেমিকার বিয়েতে কোনো প্রেমিক উপস্থিত থাকে না। আমি যেহেতু সাধারণ কোনো প্রেমিক নই, সেহেতু আমি নিতুর বিয়েতে উপস্থিত থাকব বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছি। শুধু তা-ই নয়, পেটপুরে বিরিয়ানি খাব, গায়েহলুদ অনুষ্ঠানে পাশের বাসার ভাবিদের সঙ্গে মজা করব আর সেলফি তুলব বলেও ঠিক করেছি। ১৫ দিন পর। নিতুর বিয়ে হয়ে গেছে। আমি উপস্থিত ছিলাম। পেটপুরে খেয়েছি, ভাবিদের সঙ্গে মজা করেছি, সেলফিও তুলেছি। তারপর মুখে রুমাল গুঁজে কবুলও বলেছি; আর দশটা সাধারণ বরের মতোই। ‘প্রেমিকার আব্বার’ কমন ‘বিচ্ছেদ’ থিওরিটা কাজ করেনি। নিতুর আব্বা মোটেও আর দশটা সাধারণ ‘আব্বা’ ছিলেন না!