মহাদেবপুর ও বদলগাছী দুটি উপজেলা নিয়ে নওগাঁ-৩ আসন। এই আসনের আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীর (নৌকা) মহাদেবপুর উপজেলায় অবস্থিত নির্বাচনী অফিসে আগুন দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে আওয়ামী লীগ বিদ্রোহী স্বতন্ত্র প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের বিরুদ্ধে।
স্বতন্ত্র প্রার্থী ছলিম উদ্দিন তরফদার বর্তমান এমপি। তিনি এবার নৌকা প্রতীক না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ট্রাক প্রতীকে নির্বাচন করছেন। তাই অভিযোগের তীর তার ছেলে সাকলাইন মাহমুদ রকির দিকে উঠেছে। আর এই অভিযোগে রকিকে প্রধান আসামি করে ১২ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত নামা আরও ৫-৭জনকে আসামী করা হয়েছে।
নির্বাচনী অফিসে আগুনের ঘটনাটি ঘটেছে গত বুধবার ২০ ডিসেম্বর দিবাগত রাত সাড়ে ১১টার দিকে। ওইদিন রাতেই মাহদেবপুর থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকার প্রার্থীর সমর্থক রুহুল আমিন নামের একজন। এতে নৌকার নির্বাচনী অফিসসহ পাশের খড় মিলে প্রায় দেড় লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, উপজেলার আজিপুর গ্রামের ছলিম উদ্দিন তরফদারের ছেলে সাকলাইন মাহমুদ রকি (৩৪), ঝলঝলিয়া গ্রামের নিজাম উদ্দিনের ছেলে জাহিদ হাসান (২৮), আবুল কালামের ছেলে ইউনুছ আলী (৪৫) ও মৃত নৈমুদ্দিনের ছেলে হাসান (৫০), ফাজিলপুর বরেন্দ্র মোড়ের মৃত হামিদের ছেলে মিঠু রহমান (৩৬), আন্ধারকোঠার হবিবর রহমানের ছেলে সোহাদ (৩৮), দুলালপাড়ার ইয়াকুব আলীর ছেলে আসাদুজ্জামান রতন (২৮), চানপাড়া জয়পুর এলাকার দেলোয়ার হোসেনের ছেলে হাসান আলী (২৮), সদরের রবিন চন্দ্র দাসের ছেলে রঞ্জন দাস (৪২), স্কুল পাড়ার মৃত রঞ্জুর ছেলে তনু কুমার দেব (২৬), আজিপুরের দুয়েফ উদ্দিন তরফদারের ছেলে রাকিবুল হাসান এবং জোয়ানপুরের মৃত খলিলের ছেলে হাবিব হোসেন (৩৩) আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে উপরোক্ত আসামীদের সাথে দীর্ঘদিন থেকে নির্বাচনী বিরোধ চলছিল। এবং নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রুহুল আমিনকে বিভিন্ন সময় বিভিন্নভাবে ভয়ভীতি ও হুমকি প্রদান করে আসছিলেন। তারই ধারাবাহিকতায় তারা এই ঘটনা ঘটিয়েছে।
অভিযোগকারী রুহুল আমিন বলেন, উপজেলার সদর ইউপির ঝলঝলিয়া মোড়ে রাস্তার উত্তর পাশে নৌকা প্রতীকের নির্বাচনী অফিস ঘর। সেখানে আমরা অবস্থান করছিলাম। এমন সময় হঠাৎ করে উপরোক্ত আসামীসহ আরও অজ্ঞাত ৫-৭জন বে-আইনী জনতায় দলবদ্ধ হয়ে বাঁশের লাঠি, লোহার রড ও পেট্রোল নিয়ে গত বুধবার দিবাগত রাত সাড়ে ১১টায় অতর্কিত হামলা চালায়। এরই এক পর্যায়ে সাকলাইন মাহমুদ রকির হুকুমে অন্যান্য আসামী অফিসে পেট্রোল ঢেলে আগুন লাগিয়ে দেয়। আগুনে অফিস ঘর পুড়ে যায়। এতে প্রায় ১৫ হাজার টাকার ক্ষতি হয়েছে। এছাড়া অফিসের সামনে ১৬বিঘার জমির খড়ও পুড়ে যায়। যার ফলে প্রায় এক লাখ ১২ হাজার টাকার ক্ষতি সাধন হয়েছে। এছাড়া এলাকায় কোথাও কোনো নৌকার নির্বাচনী অফিস করা যাবেনা বলে তারা যাবার সময় হুমকি দিয়ে যায়। এরফলে আমরা চরম নিরাপত্তাহীনতায় আছি। আমরা আসামীদের দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবি জানাই।
আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীর (নৌকা) নির্বাচনী সমন্বয়ক শফিকুল ইসলাম বলেন, যোগ্য লোক হিসেবে সৌরেন্দ্র নাথ চক্রবর্ত্তী সৌরেনকে বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা তাঁর দল আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে মনোনীত করেছেন। তাকে ভালোবেসে কর্মী সমর্থকেরা নির্বাচনী অফিস করছে। অথচ সেই অফিস যদি কেউ পুড়ে দেয়, তাহলে এটা জননেত্রী শেখ হাসিনার সাথে অন্যায় করা হবে। এছাড়া ভোটের মাঠ থেকে সরে দাঁড়াতে নৌকার কর্মী-সমর্থকদের বিভিন্নভাবে হুমকি দিচ্ছে আওয়ামী লীগ বিদ্রোহী প্রার্থীর লোকজন। তারই পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল গভীর রাতে আমার নির্বাচনী অফিসে আগুন দেয় তারা। আমরা এর সুষ্ঠ বিচার চাই।
অভিযোগ পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে মহাদেবপুর থানার অফিসার ইনচার্জ রুহুল আমিন বলেন, খবর পেয়ে সকালেই ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে পুলিশ। বিষয়টি খতিয়ে দেখে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।