তালেবান নেতারা তাদের বিয়েতে খরচ কমাতে না পারলে তাদেরকে বহুবিবাহ করতে নিষেধ করেছেন তালেবান কমান্ডার।
আফগানিস্তানের শীর্ষ তালেবান নেতা একটি ডিক্রি জারি করে বিভিন্ন গ্রুপের নেতা এবং কমান্ডারদেরকে বহুবিবাহ না করার এ আহ্বান জানিয়েছেন।
তিনি বলেছেন, “এটা করে আমাদের শত্রুদেরকে আমরাই সুযোগ করে দিচ্ছি সমালোচনা করার।” খবর বিবিসির।
জানা যায় – অনেক বছর ধরে আফগানিস্তানের সরকারি কর্মকর্তারা বলে আসছেন, যখন তালেবান নেতারা বিলাসবহুল জীবনযাপন করে আসছেন সেখানে সৈনিকরা একেবারে দিন আনে দিন খায় অবস্থায় দিন কাটায়।
গতবছর ডাভোস ওয়ার্ল্ড ইকোনোমিক ফোরামে আফগান প্রেসিডেন্ট আশরাফ ঘানি একটা প্যানেল আলোচনায় বলেছিলেন, “ভাল খবর হল তালেবান যোদ্ধারা যুদ্ধ করতে করতে এখন অসুস্থ হয়ে পড়েছেন এবং এখন তারা চতুর্থ এবং পঞ্চম স্ত্রীর সাথে দারুণ সময় কাটাচ্ছেন।”
এসব কারনেই আফগান তালেবান নেতা মোল্লা হাইবাতুল্লাহর নামে ইস্যু করা এক ডিক্রিতে বলা হয়েছে – তালেবান দ্বিতীয়, তৃতীয় বা চতুর্থ বিয়েকে নিষিদ্ধ করছে না। তবে বিবাহ উৎসবে যে পরিমাণ অর্থ খরচ করা হচ্ছে, তাতে করে তালেবানদের যারা প্রতিপক্ষ তাদের সুযোগ করে দেয়া হচ্ছে সমালোচনা করার জন্য।
“যদি সব নেতৃত্ব এবং কমান্ডাররা বহুবিবাহ এড়িয়ে চলেন, তাহলে তাদের অবৈধ দুর্নীতিতে জড়াতে হবে না,” বলা হয়েছে ডিক্রিতে।
তবে এ নির্দেশনায় স্পষ্ট করে বলা হয়েছে যে – ‘তবে কিছু ব্যতিক্রম রয়েছে। বহুবিবাহ যেসব পুরুষরাই করতে পারবে যাদের কোন সন্তান নেই, বা যাদের আগের কোন বিয়ে সম্পর্ক থেকে ছেলে সন্তান নেই, অথবা যারা একজন বিধবাকে বিয়ে করছে, কিংবা যারা একের অধিক স্ত্রীর ভরণপোষণ করতে পারবে।
[তালেবান সদস্য। ছবি : এপি।]
ডিক্রিতে বলা হয়েছে – এসব পরিস্থিতির বাইরে যদি কেউ বহুবিবাহ করতে চান, তাহলে বিয়ের আয়োজনের আগেই তাকে সরাসরি তার ঊর্ধ্বতন নেতার কাছ থেকে অনুমতি নিতে হবে।
তবে বেশিরভাগ জ্যেষ্ঠ তালেবান নেতাদেরই একাধিক বিয়ে রয়েছে। আফগানিস্তানে তালেবানের প্রতিষ্ঠাতা মৃত মোল্লা মোহাম্মদ ওমর এবং তার উত্তরসূরি মোল্লাহ আখতার মানসুর তাদের দুইজনেরই তিনজন স্ত্রী ছিলেন।
তালেবানের বর্তমান প্রধান মোল্লা হাইবাতুল্লাহরও দুজন স্ত্রী।
ধর্ম অনুসারে মুসলমান পুরুষরা চারটা বিয়ে করতে পারে। পাকিস্তান,আফগানিস্তানসহ মুসলিম অধ্যুষিত দেশে বহুবিবাহ সম্পূর্ণ বৈধ।
কিন্তু তালেবানের সূত্রগুলো বিবিসিকে বলেছে, এই বহুবিবাহ করতে যেয়ে কমান্ডারদের অধিক অর্থের প্রয়োজন হয়ে পড়ছে। এর কারণ – অনেক আফগানিস্তান এবং পাকিস্তানের পাশতুন আদিবাসী পরিবারে বিয়ে করতে হলে কনে পক্ষকে চড়া মূল্য দিতে হয়।
বেশিরভাগ জ্যেষ্ঠ তালেবান নেতাদের একাধিক স্ত্রী আছে। তবে যারা আগে থেকেই বহুবিবাহে আছে তাদের ক্ষেত্রে এই নতুন ডিক্রি প্রযোজ্য হবে না।
সাধারণত পাশতুন সমাজে বিয়ের পর বাচ্চা না থাকা বিশেষ করে ছেলে সন্তান না থাকাকে আরেকটি বিয়ে করার অন্যতম কারণ হিসেবে দেখা হয়।
তাছাড়া পাশতুন সমাজে বিধবাকে তার মারা যাওয়া স্বামীর ভাইয়ের সাথে বিয়ে দেয়া হয়। এতে করে বিধবা এবং পরিবারের সম্মান দুটোই রক্ষা পায়। এছাড়াও যারা আর্থিকভাবে সচ্ছল তাদের জন্য বৈধতার মধ্যে থেকে একাধিক বিয়ে একটি মর্যাদার ব্যাপার।
তবে এইসব বিয়েতে ‘ওয়ালওয়ার’ বা কনের মূল্য নামে এক প্রথা রয়েছে, যার ফলে কনের পরিবার মেয়েকে স্বামীর হাতে তুলে দেয়ার বিনিময়ে অর্থ পায়।
ইসলাম পুরুষদের একাধিক বিয়ে করার অনুমোদন দিয়েছে তবে “কিছু নির্দিষ্ট শর্তে”। তাছাড়া “এক ব্যক্তির একাধিক বিয়ে করা সম্পূর্ণ ভুল যদি সে সব স্ত্রীকে সমানভাবে আর্থিক, শারীরিক, মানসিকভাবে যত্ন নিতে না পারে”।
একটি সূত্র থেকে জানা গেছে – তালেবানদের মধ্যে একটি বিয়ের জন্য তারা ২৬ হাজার পাউন্ড থেকে এক লক্ষ পাউন্ড খরচ করছে। এই অর্থ তারা সংগঠনটির ফান্ড থেকে নিচ্ছে অথবা কেউ কেউ বিতর্কিত উপায়ে অর্থ জোগাড় করার চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ।
সূত্র : বিবিসি।