জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতৃত্ব দেয়া একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে সারাদেশে তুমুল আলোচনায় থাকা নাগরিক ঐক্যের প্রধান ড. কামাল নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন না বলে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। ড. কামাল নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন কি না এ নিয়ে একটা গুঞ্জণ ছিলো। মনোনয়ন দাখিলের সময় পার হয়ে যাওয়ার পর সে সম্ভাবনা শেষ হয়ে গেলো। তিনি নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন না এটাই এখন নিশ্চিত।
৮১ বছর বয়সী ড. কামাল হোসেন এদেশের রাজনীতিতে হঠাৎ করে গুরুত্বপুর্ন হয়ে উঠেছেন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠনের পর থেকে। তিনি গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে সচেষ্ট হয়েছেন মর্মেই ঘোষণা দিয়েছিলেন। একটি সুস্থ এবং অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন করানোর লক্ষে তিনি বিএনপিসহ ২৩ দল এবং আরো অনেক দলকে এক প্লাটফর্মে আনতে পেরেছেন। সর্বশেষ ঐক্যফ্রন্টে যোগ হয়েছিলো কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী।
বর্ণীল জীবন ইতিহাস রয়েছে ড. কামাল হোসেনের। ১৯৩৭ খ্রিস্টাব্দের ২০ এপ্রিল তিনি জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৫৭ খ্রিস্টাব্দে তিনি অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে জুরিসপ্রুডেন্সে স্নাতক (সম্মান) এবং ১৯৫৮ খ্রিস্টাব্দে ব্যাচেলর অব সিভিল ল ডিগ্রি লাভ করেন। লিংকনস ইনে বার-অ্যাট-ল অর্জনের পর আন্তর্জাতিক আইন বিষয়ে পিএইচডি করেন ১৯৬৪ খ্রিস্টাব্দে। তবে সবকিছু ছাপিয়ে তিনি এদেশের সংবিধান প্রণেতা হিসেবেই অধিক পরিচিত। ১৯৭২ সালে একটি স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের যে সংবিধান প্রণয়ন করা হয়েছিলো তিনি ছিলেন সে সংবিধান প্রণয়ন কমিটির সভাপতি। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের একান্ত সহচর হিসেবেও তিনি প্রসিদ্ধ ছিলেন।
এছাড়া রাজনীতিতে তিনি ছিলেন সবসময়ই সোচ্চার। ১৯৭০ সালের পাকিস্থানের জাতীয় পরিষদ নির্বাচনে পূর্ব পাকিস্তান থেকে আওয়ামীলীগের প্রার্থী হিসেবে জয়ী হয়েছিলেন। ১৯৭২ সালে স্বাধীন বাংলাদেশের সংবিধান রচনা কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭২ সালে আইনমন্ত্রী এবং ১৯৭৩ থেকে ১৯৭৫ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ড. কামাল হোসেন জাতিসংঘের স্পেশাল রিপোর্টারের দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি বিভিন্ন আন্তর্জাতিক কর্মকাণ্ডে সক্রিয় রয়েছেন। সর্বশেষ তিনি গণফোরাম নামের রাজনৈতিক দল প্রতিষ্ঠা করেন এবং এ দলের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি হন।
ড. কামালের নির্বাচনে অংশ না নেয়ার অনেক ব্যাখ্যাই অনেকে দিয়ে থাকেন। কারো মতে বয়সের ভারে ন্যূজ এবং অসুস্থ থাকায় তিনি নির্বাচনী দৌড়ঝাঁপ করতে চাচ্ছেন না বলেই নির্বাচনে অংশ নেননি। বিএনপির সাথে জামায়াতের জোটে থাকা এবং ধানের শীষ প্রতীকে জামায়াতের নির্বাচন করা নিয়ে তিনি কিছুটা বিব্রত তাই অনেকটা অভিমানে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন না এমন কথাও চলছে অনেকের মুখে মুখে।
জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট সরকার গঠন করলে ড. কামালের অবস্থান কী হবে তা নিয়েও আলোচনা চলছে তবে বেশিরভাগই মনে করছে রাষ্ট্রপতির আসন তিনি গ্রহণ করতে পারেন।
তিনি যে আসনই গ্রহণ করুন না কেন! একটি অস্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে বাংলাদেশে একটি সুন্দর এবং গোছালো রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আসতে পেরেছেন বলেই অনেকে মনে করছে। ড. কামালের এই অবদান রাজনীতিতে উজ্জল হয়ে থাকবে বলেই অনেকের মতামত।
H/R