বিয়ের মাধ্যমে দ্বীনের অর্ধেক পূর্ণ হয় বলে হাদিসে বর্ণিত হয়েছে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘যখন বান্দা বিয়ে করে, তখন সে তার দ্বীনের অর্ধেক পূরণ করে। অতএব, বাকি অর্ধেকাংশে সে যেন আল্লাহকে ভয় করে।’ (সহিহ আল-জামিউস সাগির ওয়া জিয়াদাতুহু, হাদিস, ৬১৪৮; তাবরানি, হাদিস, ৯৭২; মুসতাদরাক হাকিম, হাদিস : ২৭২৮)
বিয়েতে নারীকে দেনমোহর দেওয়া স্বামীর জন্য ওয়াজিব। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন,
اَلۡیَوۡمَ اُحِلَّ لَکُمُ الطَّیِّبٰتُ ؕ وَ طَعَامُ الَّذِیۡنَ اُوۡتُوا الۡکِتٰبَ حِلٌّ لَّکُمۡ ۪ وَ طَعَامُکُمۡ حِلٌّ لَّهُمۡ ۫ وَ الۡمُحۡصَنٰتُ مِنَ الۡمُؤۡمِنٰتِ وَ الۡمُحۡصَنٰتُ مِنَ الَّذِیۡنَ اُوۡتُوا الۡکِتٰبَ مِنۡ قَبۡلِکُمۡ اِذَاۤ اٰتَیۡتُمُوۡهُنَّ اُجُوۡرَهُنَّ مُحۡصِنِیۡنَ غَیۡرَ مُسٰفِحِیۡنَ وَ لَا مُتَّخِذِیۡۤ اَخۡدَانٍ ؕ وَ مَنۡ یَّکۡفُرۡ بِالۡاِیۡمَانِ فَقَدۡ حَبِطَ عَمَلُهٗ ۫ وَ هُوَ فِی الۡاٰخِرَۃِ مِنَ الۡخٰسِرِیۡنَ
‘আজ তোমাদের জন্য সমস্ত ভাল জিনিস হালাল করা হলো ও যাদেরকে কিতাব দেয়া হয়েছে তাদের খাদ্যদ্রব্য তোমাদের জন্য হলাল এবং তোমাদের খাদ্যদ্রব্য তাদের জন্য বৈধ। আর মুমিন সচ্চরিত্রা নারী ও তোমাদের আগে যাদেরকে কিতাব দেয়া হয়েছে তাদের সচ্চরিত্রা নারীদেরকে তোমাদের জন্য বৈধ করা হল, যদি তোমরা তাদের মোহর প্রদান কর বিয়ের জন্য, প্রকাশ্য ব্যভিচার বা গোপন প্রণয়িনী গ্রহণকারী হিসেবে নয়। আর কেউ ঈমানের সাথে কুফরী করলে তার কর্ম অবশ্যই নিষ্ফল হবে এবং সে আখেরাতে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে(সুরা মায়েদা. আয়াত, ৫)
বিয়েতে যে দেনমোহর নির্ধারণ করা হয় তা আদায় করা ওয়াজিব। আদায়ের ক্ষেত্রে অবহেলা করলে বা ইচ্ছা করে আদায় না কঠিন শাস্তি পেতে হবে।
কানজুলউম্মাল এবং বায়হাকিতে বর্ণিত একটি হাদিসে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যে ব্যক্তি কোনো নারীকে বিয়ে করলো এবং তার মোহর বাকি রাখলো এরপর সে ইচ্ছা করলো মোহর আংশিক বা একেবারেই আদায় করবে না তাহলে সে ব্যভিচারী হয়ে যাবে এবং আল্লাহর সঙ্গে ব্যভিচারী হিসেবে সাক্ষাৎ করবে। (ইসলাহে ইনকিলাব, ২য় খন্ড, পৃষ্ঠা , ১২৭, কানজুল উম্মাল, ৮ম খন্ড, পৃষ্ঠা ২৪৮)
তাই বিয়েতে যে মোহর নির্ধারণ করা হয় তা আদায় করতেই হবে। একসঙ্গে আদায় করা সম্ভব না হলে ধীরে ধীরে অল্প পরিণামে আদায় করতে হবে।
তবে কোনো বিয়েতে যদি মোহরের পরিমাণ বেশি ধরা হয় এবং স্বামী যদি এতোটা অক্ষম হয় যে, তার পক্ষ থেকে সেই পরিমাণ মোহর আদায় করা সম্ভব না হয় তাহলে তার জন্য করণীয় হলো- যতটুকু সম্ভব আদায় করবে এরপর যে পরিমাণ আদায়ের সামর্থ্য থাকবে না সেই অংশটা মাফ চেয়ে নিতে হবে। এক্ষেত্রে লক্ষণীয় হলো, স্ত্রী যদি খুমশি মনে মাফ করে দেয় তাহলে তা মাফ হয়ে যাবে।
দেন-মোহরের ক্ষেত্রে আদায়ের সামর্থ্য না থাকা এবং স্ত্রীর কাছে মাফ চেয়ে নেওয়ার মতো লজ্জাজনক পরিস্থিতির মুখোমুখি যেন না হতে হয়, এজন্য মোহর নির্ধারণের সময় এ বিষয়টিতে খেয়াল রাখতে হবে। মানুষকে দেখানোর জন্য মোটা অংকের মোহর নির্ধারণ না করে এমন পরিমাণই নির্ধারণ করা উচিত যা সহজে আদায় করা যায়।
বিয়েতে মোটা অংকের মোহর নির্ধারণকে মর্যাদার মনে করে অনেকে। অথচ এটা মর্যাদাকর কোনো ব্যাপার নয়। বরং মোটা অংকের মোহর নির্ধারণ করে তা আদায় করতে না পারা অমর্যাদা এবং অসম্মানজনক।
হাদিস শরিফে এসেছে, নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘সর্বোত্তম মোহরানা হচ্ছে- সহজসাধ্য মোহরানা’। (বাইহাকি, হাদিস, ১৪৭২১)
এক হাদিসে আম্মাজান আয়েশা রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘কনের বরকতের আলামত হচ্ছে, বিয়ের প্রস্তাবনা সহজ হওয়া, মোহরানা সহজসাধ্য হওয়া এবং গর্ভ ধারণ সহজ হওয়া।’ (সহিহুল জামে, হাদিস, ২২৩৫, মুসনাদে আহমাদ, হাদিস, ২৩৯৫৭)
(ফতোয়ায়ে ফকীহুল মিল্লাত, ২/৯৫, ফতোয়ায়ে শামী’, ৩/১০২; ফতোয়ায়ে দারুল উলুম দেওবন্দ, ৮/২৬৩)
কটু/বি