নোয়াখালীর জেলা শহর মাইজদীতে প্রসূতিসহ নবজাতকের মৃত্যুর ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে সাউথ বাংলা হাসপাতালের অপারেশন থিয়েটার সিলগালা করেছেন স্বাস্থ্য বিভাগ।
বুধবার (২৭ ডিসেম্বর) দুপুরে দিকে জেলা সিভিল সার্জন ডা. মাসুম ইফতেখারের লিখিত আদেশে সিলগালা করা হয়।
লিখিত আদেশে বলা হয়, গত ১৬ অক্টোবর রাত পৌনে ১২টার দিকে জেলা শহরের সাউথ বাংলা হসপিটালে সেনবাগ পৌরসভার দক্ষিণ কাদরা গ্রামের এম এ আউয়ালের মেয়ে উম্মে সালমা নিশির (২৭) সিজারিয়ান অপারেশনের সময় নবজাতকসহ মৃত্যু ঘটে। এ ঘটনায় মৃত নিশির বাবার অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে সিভিল সার্জন নোয়াখালীর গঠিত তদন্ত কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে সাউথ বাংলা হসপিটালের অপারেশন থিয়েটারের কার্যক্রম পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বন্ধ রাখার নির্দেশ প্রদান করেন সিভিল সার্জন ডা. মাসুম ইফতেখার।
লিখিত আদেশে আরও বলা হয় এর ব্যতয় ঘটলে ১৯৮২ সালের বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিক পরিচালনা আইনের বিধান অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জানা যায়, জেলা সিভিল সার্জন ডা. মাসুম ইফতেখারের লিখিত আদেশ নিয়ে বুধবার (২৭ ডিসেম্বর) দুপুরে সাউথ বাংলা হসপাতাল সরেজমিন পরিদর্শন করেন সিভিল সার্জন অফিসে কর্মরত ডা. সৌরভ হোসেন, জুনিয়র স্বাস্থ্য শিক্ষা অফিসার ডা. কামাল উদ্দিন, অফিস কাম কম্পিউটার অপারেটর মোস্তাফিজুর রহমান ও অফিস সহায়ক আবু সুফিয়ান। পরিদর্শনকারী দল সিএসের আদেশের চিঠিটি সাউথ বাংলা হসপিটাল কর্তৃপক্ষকে হস্তান্তর করে তাৎক্ষণিক অপারেশন থিয়েটার সিলগালা করে দেন।
আরও জানা গেছে, গত ১৬ অক্টোবর রাতে সেনবাগ প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সাংবাদিক এম এ আউয়াল তার একমাত্র মেয়ে নয় মাসের অন্তঃসত্ত্বা উম্মে সালমা নিশির বাবুর ২৪১ হার্টবিট নিয়ে চিকিৎসার জন্য সাউথ বাংলা হসপিটালে আসেন। এ সময় হসপিটাল কর্তৃপক্ষ, কর্মরত মেডিকেল সহকারী জাহিদ হোসেনের সহায়তায় ডা. আক্তার হোসেন অভি ও তার স্ত্রী ডা. ফৌজিয়া ফরিদ রোগীর কোনো রকম পরীক্ষা-নীরিক্ষা না করে এবং অভিভাবকের সম্মতি না নিয়েই সিজারে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। মুহূর্তেই মা ও সন্তানের মৃত্যু ঘটে। ঘটনা ধামাচাপা দিতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও চিকিৎসক ডা. অভি তার স্ত্রী ফৌজিয়া ফরিদ প্রসূতির অবস্থা সংকটাপন্ন জানিয়ে আইসিইউ সাপোর্টের কথা বলে কুমিল্লায় প্রেরণ করে। পরে ভুল চিকিৎসায় প্রসূতি ও নবজাতকের মৃত্যুর অভিযোগ করা হয়।
সিভিল সার্জন ডা. মাসুম ইফতেখার ঢাকা পোস্টকে বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, ভুক্তভোগী পরিবারের লিখিত অভিযোগ পেয়ে এ ব্যাপারে তিন দফায় তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। তদন্ত কমিটি দীর্ঘ সময় হাসপাতাল, সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক ও বাদীর পৃথক পৃথক ভাবে সাক্ষাৎকার রেকর্ড করা হয়। ইতোমধ্যে তদন্ত প্রতিবেদনটি পরবর্তী ব্যবস্থা নিতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে প্রেরণ করা হয়েছে। তদন্তে সাউথ বাংলা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের গাফিলতি পেয়ে তাদের অপারেশন থিয়েটার সিলগালা করে দেওয়া হয়েছে।
এ ব্যাপারে অভিযোগকারী সাংবাদিক এম এ আউয়াল ঢাকা পোস্টকে বলেন, সাউথ বাংলা হাসপাতালে আমার একমাত্র মেয়ে ও নাতির চিকিৎসকের অবহেলা ও ভুল চিকিৎসায় মৃত্যু হয়েছে। আমি অসহায় বাবা এক মাত্র কন্যাকে হারিয়েছি। চিকিৎসক নামের কসাইদের কারণে পৃথিবীর আলো দেখতে পারেনি আমার নাতি। আমি সিভিল সার্জন বরাবর অভিযোগ দিয়েছি। আশা করি খুব দ্রুতই কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।